নোয়াখালী ০১:০০ অপরাহ্ন, রবিবার, ২২ ডিসেম্বর ২০২৪, ৮ পৌষ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

হাতিয়ায় এখনো জনপ্রিয় বাঁশের তৈরি কুটির শিল্প

হাতিয়া প্রতিনিধি
  • আপডেট সময় ০২:১৫:২৬ অপরাহ্ন, বুধবার, ৪ ডিসেম্বর ২০২৪
  • / ১২৭৩ বার পড়া হয়েছে

গ্রামবাংলার একসময়ের ঐতিহ্য বাঁশের তৈরি কুটির শিল্পের জিনিস। কালের বিবর্তনে হারিয়ে যাচ্ছে এসব হস্তশিল্প। গ্রামীণ অর্থনীতিতে জোগান দেওয়া এই শিল্পটি হারিয়ে যাচ্ছে প্লাস্টিক এবং ককসিটের আধুনিকতার ভিড়ে। এভাবে হারিয়ে যেতে থাকা বাঁশশিল্পকে আঁকড়ে ধরে জীবিকা নির্বাহ করছেন নোয়াখালীর হাতিয়া উপজেলার কয়েকশ মানুষ।

দেশের গ্রামীণ অর্থনীতিতে ঐতিহ্যবাহী কুটিরশিল্প, বিশেষ করে বাঁশের তৈরি পণ্য একসময় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করত। বাঁশের তৈরি ঝুড়ি, চাটাই, মোড়া, চালনি, হাতপাখা, খাঁচা, মই, চাই, আন্তা, ঢুলা, খলই, কুলা এর মধ্যে অন্যতম। শিল্পটি গ্রামের মানুষের জীবিকা নির্বাহের একটি বড় উৎস ছিল। বিশেষ করে নারীরা ঘরে বসেই এ কাজ করতে পারত এবং পরিবারের অর্থনৈতিক অবস্থা উন্নত করতে পারত।

উপজেলার সোনাদিয়া ইউনিয়নের পূর্ব চরচেঙ্গা গ্রামের মারজানা বেগম বলেন, ‘আমরা তো আগে অনেক জিনিসপত্র বানাতাম। এখন আর বানাই না। অল্প করে বানাই, আগের মতো বেচাকেনাও হয় না। এখন সবাই প্লাস্টিকের তৈরি জিনিসপত্র ব্যবহার করে। তাই বাঁশ কিনে জিনিসপত্র বানিয়ে খরচ উঠে না। বাঁশ কিনতেও বেশি টাকা লাগে আর জিনিসপত্রও বিক্রি হয় না।’

নলচিরা ইউনিয়নের আলাদী গ্রামের শাহেনা বেগম বলেন, ‘বাশেঁর তৈরি জিনিসপত্র অনেক কষ্ট করে বানাতে হয়। সেই তুলনায় মজুরি পাওয়া যায় না। এরপরও নিজের পরিবার চালাতে এসব বানাতে হয়। মানুষ যদি প্লাস্টিকের তৈরি জিনিসপত্র ব্যবহার না করত, তা হলে এর বেচাকেনা বেশি হতো। আমরাও ভালো পারিশ্রমিক পেতাম।’

এ বিষয়ে ক্রেতা আব্দুল রহমান বলেন, ‘বাঁশের তৈরি জিনিসপত্র আগে সবাই ব্যবহার করত, আমরাও করতাম। এখন সহজে প্লাস্টিকের জিনিসপত্র পাওয়া যায়, আবার টিকেও বেশি দিন। তাই খুব প্রয়োজন না হলে আমাদেরও বাঁশের তৈরি জিনিসপত্র কেনা হয় না।’

সোনাদিয়া ইউনিয়নের পূর্বচরচেঙ্গা গ্রামের ব্যবসায়ী মো. মোকারম হোসেন বলেন, ‘গত ৩৫ থেকে ৪০ বছর ধরে এ ব্যবসা করে আসছি। তবে ৩ থেকে ৫ বছর ধরে ব্যবসা খুবই খারাপ যাচ্ছে। প্লাস্টিক আর ককসিট আমাদের শেষ করে দিচ্ছে।’

আরেক ব্যবসায়ী মজিবুর রহমান বলেন, ‘একসময় হাট-বাজারে বাঁশের তৈরি জিনিসপত্র নিয়ে গেলে বিক্রি হয়ে যেত। এখন হাট শেষ হয়ে যায়, কিন্তু এগুলো আর আগের মতো বিক্রি হয় না। তাই বিক্রি না হওয়া জিনিসপত্র নিয়ে ফিরে যেতে হয়। তবুও আমি বাপ-দাদার পেশাটি এখনো পর্যন্ত ধরে রেখেছি। আজীবন এই পেশা ধরে রাখতে চাই।’

হাতিয়া দ্বীপ সরকারি কলেজের অর্থনীতির প্রভাষক প্রতীক সিকদার বলেন, ‘প্লাস্টিকের পণ্যের সহজলভ্যতার কারণে বাঁশশিল্প হারিয়ে যেতে বসেছে। প্লাস্টিকের তৈরি পণ্য তুলনামূলক সস্তা এবং টেকসই হওয়ার কারণে বাঁশের তৈরি জিনিসপত্রের চাহিদা কমে গেছে। ফলে এ শিল্পে জড়িত কারিগররা আর্থিক চাপে পড়েছেন। অনেকেই পেশা পরিবর্তন করতে বাধ্য হচ্ছেন। এ ছাড়া বাঁশের তৈরি সব মালামালের বেচা-বিক্রি এত কমে গেছে যে, শিল্পটি ভবিষ্যতে বিলুপ্ত হয়ে যাবে।’

নিউজটি শেয়ার করুন

হাতিয়ায় এখনো জনপ্রিয় বাঁশের তৈরি কুটির শিল্প

আপডেট সময় ০২:১৫:২৬ অপরাহ্ন, বুধবার, ৪ ডিসেম্বর ২০২৪

গ্রামবাংলার একসময়ের ঐতিহ্য বাঁশের তৈরি কুটির শিল্পের জিনিস। কালের বিবর্তনে হারিয়ে যাচ্ছে এসব হস্তশিল্প। গ্রামীণ অর্থনীতিতে জোগান দেওয়া এই শিল্পটি হারিয়ে যাচ্ছে প্লাস্টিক এবং ককসিটের আধুনিকতার ভিড়ে। এভাবে হারিয়ে যেতে থাকা বাঁশশিল্পকে আঁকড়ে ধরে জীবিকা নির্বাহ করছেন নোয়াখালীর হাতিয়া উপজেলার কয়েকশ মানুষ।

দেশের গ্রামীণ অর্থনীতিতে ঐতিহ্যবাহী কুটিরশিল্প, বিশেষ করে বাঁশের তৈরি পণ্য একসময় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করত। বাঁশের তৈরি ঝুড়ি, চাটাই, মোড়া, চালনি, হাতপাখা, খাঁচা, মই, চাই, আন্তা, ঢুলা, খলই, কুলা এর মধ্যে অন্যতম। শিল্পটি গ্রামের মানুষের জীবিকা নির্বাহের একটি বড় উৎস ছিল। বিশেষ করে নারীরা ঘরে বসেই এ কাজ করতে পারত এবং পরিবারের অর্থনৈতিক অবস্থা উন্নত করতে পারত।

উপজেলার সোনাদিয়া ইউনিয়নের পূর্ব চরচেঙ্গা গ্রামের মারজানা বেগম বলেন, ‘আমরা তো আগে অনেক জিনিসপত্র বানাতাম। এখন আর বানাই না। অল্প করে বানাই, আগের মতো বেচাকেনাও হয় না। এখন সবাই প্লাস্টিকের তৈরি জিনিসপত্র ব্যবহার করে। তাই বাঁশ কিনে জিনিসপত্র বানিয়ে খরচ উঠে না। বাঁশ কিনতেও বেশি টাকা লাগে আর জিনিসপত্রও বিক্রি হয় না।’

নলচিরা ইউনিয়নের আলাদী গ্রামের শাহেনা বেগম বলেন, ‘বাশেঁর তৈরি জিনিসপত্র অনেক কষ্ট করে বানাতে হয়। সেই তুলনায় মজুরি পাওয়া যায় না। এরপরও নিজের পরিবার চালাতে এসব বানাতে হয়। মানুষ যদি প্লাস্টিকের তৈরি জিনিসপত্র ব্যবহার না করত, তা হলে এর বেচাকেনা বেশি হতো। আমরাও ভালো পারিশ্রমিক পেতাম।’

এ বিষয়ে ক্রেতা আব্দুল রহমান বলেন, ‘বাঁশের তৈরি জিনিসপত্র আগে সবাই ব্যবহার করত, আমরাও করতাম। এখন সহজে প্লাস্টিকের জিনিসপত্র পাওয়া যায়, আবার টিকেও বেশি দিন। তাই খুব প্রয়োজন না হলে আমাদেরও বাঁশের তৈরি জিনিসপত্র কেনা হয় না।’

সোনাদিয়া ইউনিয়নের পূর্বচরচেঙ্গা গ্রামের ব্যবসায়ী মো. মোকারম হোসেন বলেন, ‘গত ৩৫ থেকে ৪০ বছর ধরে এ ব্যবসা করে আসছি। তবে ৩ থেকে ৫ বছর ধরে ব্যবসা খুবই খারাপ যাচ্ছে। প্লাস্টিক আর ককসিট আমাদের শেষ করে দিচ্ছে।’

আরেক ব্যবসায়ী মজিবুর রহমান বলেন, ‘একসময় হাট-বাজারে বাঁশের তৈরি জিনিসপত্র নিয়ে গেলে বিক্রি হয়ে যেত। এখন হাট শেষ হয়ে যায়, কিন্তু এগুলো আর আগের মতো বিক্রি হয় না। তাই বিক্রি না হওয়া জিনিসপত্র নিয়ে ফিরে যেতে হয়। তবুও আমি বাপ-দাদার পেশাটি এখনো পর্যন্ত ধরে রেখেছি। আজীবন এই পেশা ধরে রাখতে চাই।’

হাতিয়া দ্বীপ সরকারি কলেজের অর্থনীতির প্রভাষক প্রতীক সিকদার বলেন, ‘প্লাস্টিকের পণ্যের সহজলভ্যতার কারণে বাঁশশিল্প হারিয়ে যেতে বসেছে। প্লাস্টিকের তৈরি পণ্য তুলনামূলক সস্তা এবং টেকসই হওয়ার কারণে বাঁশের তৈরি জিনিসপত্রের চাহিদা কমে গেছে। ফলে এ শিল্পে জড়িত কারিগররা আর্থিক চাপে পড়েছেন। অনেকেই পেশা পরিবর্তন করতে বাধ্য হচ্ছেন। এ ছাড়া বাঁশের তৈরি সব মালামালের বেচা-বিক্রি এত কমে গেছে যে, শিল্পটি ভবিষ্যতে বিলুপ্ত হয়ে যাবে।’