নোয়াখালী ০৯:১৭ অপরাহ্ন, বুধবার, ২০ নভেম্বর ২০২৪, ৬ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

প্রবাসী নেতাকে ধাক্কা

কোম্পানীগঞ্জ উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ককে ‘গণপিটুনি’ নেতাকর্মীদের

নোয়াখালী প্রতিনিধি
  • আপডেট সময় ০৭:৫০:১২ অপরাহ্ন, সোমবার, ১১ নভেম্বর ২০২৪
  • / ১২৭৬ বার পড়া হয়েছে

র‌্যালীর সামনে প্রবাসী কামালকে ধাক্কা দিচ্ছেন সিকদার। ইনসেটে নুরুল আলম সিকদার।

নোয়াখালীর কোম্পানীগঞ্জে মিছিলের সামনে থাকা নিয়ে এক প্রবাসীকে ধাক্কা দিয়ে নেতাকর্মীদের গণপিটুনির শিকার হয়েছেন উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক নুরুল আলম সিকদার। এরআগে তিনি মসজিদ কমিটি দখল করে নিজেকে সভাপতি ঘোষণা করে সমালোচিত হন।

সোমবার (১১ নভেম্বর) দুপুরে বসুরহাটে উপজেলা ও পৌর বিএনপি আয়োজিত জাতীয় বিপ্লব ও সংগতি দিবসের আলোচনা সভা শেষে র‌্যালীতে এ ঘটনা ঘটে।

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, আলোচনা সভায় প্রবাসীদের হুমকি দিয়ে বক্তব্য দেন নুরুল আলম সিকদার। পরে র‌্যালীর সামনে যেতে চাইলে সাবেক ছাত্রদল নেতা ও উপজেলা বিএনপির সদস্য আমোরিকা প্রবাসী মো. কামাল উদ্দিনকে ধাক্কা দেন সিকদার। এসময় দুজনের মধ্যে হাতাহাতির ঘটনা ঘটে। পরে উপজেলা পরিষদ চত্ত্বরে র‌্যালী শেষে এ নিয়ে শিকদার তেড়ে আসতে চাইলে তাকে নেতাকর্মীরা বেদম গণপিটুনি দেয়। পরে তিনি দৌঁড়ে পাশে সেলুন দোকানে ঢুকে নিজেকে আত্মরক্ষা করেন।

এরআগে আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে নুরুল আলম সিকদার বলেন, ‘কিছু ব্যক্তি বিএনপির দুঃসময়ে পালিয়ে গিয়ে দীর্ঘদিন প্রবাসে ছিলেন। এখন অনেকে দেশে এসে বিএনপি নেতা হওয়ার স্বপ্ন দেখছেন। আপনারা মিছিলের সামনে আসার চেষ্টা করবেন না। আপনারা থাকবেন নির্যাতিত নেতাকর্মীদের পিছনে। সামনে আসতে চাইলে আওয়ামী লীগের মির্জা এবং কাউয়া কাদেরের ১৭ বছরে সন্ত্রাসী, অস্ত্রধারী, খুনি, লুটেরা, চাঁদাবাজদের যে ব্যবস্থা করা হবে আপনাদেরও ঠিক সেই ব্যবস্থা করা হবে।’

তিনি আরও বলেন, ‘আমাদের নেতার অভাব নাই ভোটারেরও অভাব নাই। আপনারা (প্রবাসীরা) এসে বিএনপির জন্য মায়াকান্না করবেন না। আমি আমার নেতাকর্মীদেরকে বলবো কাদের মির্জা ও কাউয়া কাদেরের সন্ত্রাসী অস্ত্রধারী চাঁদাবাজদের যেখানে পাবেন হাত-পা ভেঙে কুচা কুচা করে রাস্তার কূলে ফেলে রাখবেন। এতে আমার চাকরী (পদ) গেলেও যাক। তবে কোন সাধারণ মানুষ, তাদের বাড়িঘর বা হিন্দু বাড়িতে হামলা করবেন না। যদি করেন আপনি যতো নির্যাতিত হোন না কেন ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

প্রবাসী কামাল উদ্দিন অভিযোগ করে বলেন, ‘নুরুল আলম সিকদার মেয়াদোত্তীর্ণ উপজেলা কমিটির আহ্বায়ক। তিনি গত ৫ আগস্টের পর থেকে চাঁদাবাজি, ঘের দখল, বালু মহালসহ পলাতক আওয়ামী লীগ নেতাদের থেকে টাকা হাতিয়ে দলের ভাবমুর্তি ক্ষুণ্ন করছেন। এসব বিষয়ে প্রতিবাদ করায় তিনি আমাদের সহ্য করতে পারছেন না। সোমবার জাতীয় বিপ্লব ও সংহতি দিবসের আলোচনায় প্রবাসীদের নানা কটু কথা বলেন। পরে র‌্যালীতে আমাকে ধাক্কা মারেন। এরপর উপজেলায় গিয়ে আমার দিকে তেড়ে আসতে চাইলে নেতাকর্মীরা বাধা দিয়ে গণপিটুনি দেন।’

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক উপজেলা বিএনপির এক নেতা বলেন, ৫ আগস্টের পর থেকে নুরুল আলম সিকদার নিজেকে পলাতক কাদের মির্জা স্টাইলে আবির্ভুত করেন। তিনি নেতাকর্মীদের কাউকে সহ্য করতে পারছেন না। তার অতিরঞ্জিত বাড়াবাড়ির কারণে আজ হেনস্তার শিকার হয়েছেন। নেতাকর্মীদের পিটুনিতে তার গায়ের জামা ছিড়ে যায়। তাকে রক্ষা করতে উপজেলার কোন নেতা এগিয়ে আসেননি। এটাও দুঃখজনক।

এসব বিষয়ে জানতে নুরুল আলম সিকদারকে একাধিকবার ফোন দিলেও তিনি বারবার ফোনের লাইন কেটে দেন। পরে হামলার বিষয়ে বক্তব্য চেয়ে মেসেজ দিলেও তিনি কোন উত্তর দেননি।

জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট আবদুর রহমান বলেন, ঘটনাটি শুনেছি। তদন্ত করে দায়ীদের বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

এরআগে গত ২৮ অক্টোবর নোয়াখালীর কোম্পানীগঞ্জে বসুরহাট কেন্দ্রীয় জামে মসজিদের কমিটি দখল করে মুসল্লিদের মতামত না নিয়ে নিজেকে ওই কিমিটির সভাপতি ঘোষণার অভিযোগ উঠে উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক নুরুল আলম সিকদারের বিরুদ্ধে। আগে এ পদে বসুরহাট পৌরসভার সাবেক মেয়র আবদুল কাদের মির্জা দায়িত্ব পালন করেছেন। তিনি এখন পলাতক। কমিটি দখলের প্রতিবাদে ইউএনওকে স্মারকলিপি দিয়েছে মুসল্লিরা।

নিউজটি শেয়ার করুন

প্রবাসী নেতাকে ধাক্কা

কোম্পানীগঞ্জ উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ককে ‘গণপিটুনি’ নেতাকর্মীদের

আপডেট সময় ০৭:৫০:১২ অপরাহ্ন, সোমবার, ১১ নভেম্বর ২০২৪

নোয়াখালীর কোম্পানীগঞ্জে মিছিলের সামনে থাকা নিয়ে এক প্রবাসীকে ধাক্কা দিয়ে নেতাকর্মীদের গণপিটুনির শিকার হয়েছেন উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক নুরুল আলম সিকদার। এরআগে তিনি মসজিদ কমিটি দখল করে নিজেকে সভাপতি ঘোষণা করে সমালোচিত হন।

সোমবার (১১ নভেম্বর) দুপুরে বসুরহাটে উপজেলা ও পৌর বিএনপি আয়োজিত জাতীয় বিপ্লব ও সংগতি দিবসের আলোচনা সভা শেষে র‌্যালীতে এ ঘটনা ঘটে।

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, আলোচনা সভায় প্রবাসীদের হুমকি দিয়ে বক্তব্য দেন নুরুল আলম সিকদার। পরে র‌্যালীর সামনে যেতে চাইলে সাবেক ছাত্রদল নেতা ও উপজেলা বিএনপির সদস্য আমোরিকা প্রবাসী মো. কামাল উদ্দিনকে ধাক্কা দেন সিকদার। এসময় দুজনের মধ্যে হাতাহাতির ঘটনা ঘটে। পরে উপজেলা পরিষদ চত্ত্বরে র‌্যালী শেষে এ নিয়ে শিকদার তেড়ে আসতে চাইলে তাকে নেতাকর্মীরা বেদম গণপিটুনি দেয়। পরে তিনি দৌঁড়ে পাশে সেলুন দোকানে ঢুকে নিজেকে আত্মরক্ষা করেন।

এরআগে আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে নুরুল আলম সিকদার বলেন, ‘কিছু ব্যক্তি বিএনপির দুঃসময়ে পালিয়ে গিয়ে দীর্ঘদিন প্রবাসে ছিলেন। এখন অনেকে দেশে এসে বিএনপি নেতা হওয়ার স্বপ্ন দেখছেন। আপনারা মিছিলের সামনে আসার চেষ্টা করবেন না। আপনারা থাকবেন নির্যাতিত নেতাকর্মীদের পিছনে। সামনে আসতে চাইলে আওয়ামী লীগের মির্জা এবং কাউয়া কাদেরের ১৭ বছরে সন্ত্রাসী, অস্ত্রধারী, খুনি, লুটেরা, চাঁদাবাজদের যে ব্যবস্থা করা হবে আপনাদেরও ঠিক সেই ব্যবস্থা করা হবে।’

তিনি আরও বলেন, ‘আমাদের নেতার অভাব নাই ভোটারেরও অভাব নাই। আপনারা (প্রবাসীরা) এসে বিএনপির জন্য মায়াকান্না করবেন না। আমি আমার নেতাকর্মীদেরকে বলবো কাদের মির্জা ও কাউয়া কাদেরের সন্ত্রাসী অস্ত্রধারী চাঁদাবাজদের যেখানে পাবেন হাত-পা ভেঙে কুচা কুচা করে রাস্তার কূলে ফেলে রাখবেন। এতে আমার চাকরী (পদ) গেলেও যাক। তবে কোন সাধারণ মানুষ, তাদের বাড়িঘর বা হিন্দু বাড়িতে হামলা করবেন না। যদি করেন আপনি যতো নির্যাতিত হোন না কেন ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

প্রবাসী কামাল উদ্দিন অভিযোগ করে বলেন, ‘নুরুল আলম সিকদার মেয়াদোত্তীর্ণ উপজেলা কমিটির আহ্বায়ক। তিনি গত ৫ আগস্টের পর থেকে চাঁদাবাজি, ঘের দখল, বালু মহালসহ পলাতক আওয়ামী লীগ নেতাদের থেকে টাকা হাতিয়ে দলের ভাবমুর্তি ক্ষুণ্ন করছেন। এসব বিষয়ে প্রতিবাদ করায় তিনি আমাদের সহ্য করতে পারছেন না। সোমবার জাতীয় বিপ্লব ও সংহতি দিবসের আলোচনায় প্রবাসীদের নানা কটু কথা বলেন। পরে র‌্যালীতে আমাকে ধাক্কা মারেন। এরপর উপজেলায় গিয়ে আমার দিকে তেড়ে আসতে চাইলে নেতাকর্মীরা বাধা দিয়ে গণপিটুনি দেন।’

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক উপজেলা বিএনপির এক নেতা বলেন, ৫ আগস্টের পর থেকে নুরুল আলম সিকদার নিজেকে পলাতক কাদের মির্জা স্টাইলে আবির্ভুত করেন। তিনি নেতাকর্মীদের কাউকে সহ্য করতে পারছেন না। তার অতিরঞ্জিত বাড়াবাড়ির কারণে আজ হেনস্তার শিকার হয়েছেন। নেতাকর্মীদের পিটুনিতে তার গায়ের জামা ছিড়ে যায়। তাকে রক্ষা করতে উপজেলার কোন নেতা এগিয়ে আসেননি। এটাও দুঃখজনক।

এসব বিষয়ে জানতে নুরুল আলম সিকদারকে একাধিকবার ফোন দিলেও তিনি বারবার ফোনের লাইন কেটে দেন। পরে হামলার বিষয়ে বক্তব্য চেয়ে মেসেজ দিলেও তিনি কোন উত্তর দেননি।

জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট আবদুর রহমান বলেন, ঘটনাটি শুনেছি। তদন্ত করে দায়ীদের বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

এরআগে গত ২৮ অক্টোবর নোয়াখালীর কোম্পানীগঞ্জে বসুরহাট কেন্দ্রীয় জামে মসজিদের কমিটি দখল করে মুসল্লিদের মতামত না নিয়ে নিজেকে ওই কিমিটির সভাপতি ঘোষণার অভিযোগ উঠে উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক নুরুল আলম সিকদারের বিরুদ্ধে। আগে এ পদে বসুরহাট পৌরসভার সাবেক মেয়র আবদুল কাদের মির্জা দায়িত্ব পালন করেছেন। তিনি এখন পলাতক। কমিটি দখলের প্রতিবাদে ইউএনওকে স্মারকলিপি দিয়েছে মুসল্লিরা।