নোয়াখালী ০৪:৪৭ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১৯ ডিসেম্বর ২০২৪, ৫ পৌষ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

নোয়াখালীর কবিরহাট

শহীদ বীর মুক্তিযোদ্ধা অহিদুর রহমান অদুদের ৫২তম মৃত্যুবার্ষিকী পালিত

কবিরহাট সংবাদদাতা
  • আপডেট সময় ০৮:০০:৫৯ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ২১ নভেম্বর ২০২৩
  • / ১৩৬৫ বার পড়া হয়েছে

নোয়াখালীর কবিরহাটে শহীদ বীর মুক্তিযোদ্ধা অহিদুর রহমান অদুদের ৫২তম শাহাদাৎ বার্ষিকী পালিত হয়েছে। মঙ্গলবার (২১ নভেম্বর) শহীদের সমাধিস্থল ধানশালিক ইউনিয়নের লামছিপ্রসাদ তাকিয়া বাজারে ওই কর্মসূচি পালিত হয়।

শহীদ বীর মুক্তিযোদ্ধা অহিদুর রহমান অদুদ স্মৃতি সংসদের উদ্যোগে আয়োজিত অনুষ্ঠানে কবর জিয়ারত, আলোচনা সভা, মিলাদ ও দোয়ার মাহফিলের আয়োজন করা হয়।

এসময় শহীদ বীর মুক্তিযোদ্ধা অহিদুর রহমান অদুদ স্মৃতি সংসদের সভাপতি বিশিষ্ট সমাজসেবক ও বীর মুক্তিযোদ্ধা মো. শাহআলমের সভাপতিত্বে এলাকার বীর মুক্তিযোদ্ধা, বিশিষ্ট নাগরিকসহ সংগঠনের সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন। তারা শহীদ অদুদের আত্মার মাগফিরাত কামনা করে বক্তব্য রাখেন।

সংগঠন সূত্রে জানা গেছে, শহীদ অদুদ মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন সময় বাংলাদেশ লিভারেশান ফোর্সের (বি.এল.এফ) অবিভক্ত সদর থানার অধিনায়ক ছিলেন। ১৯৭১ সালের ২১ নভেম্বর কোম্পানীগঞ্জ উপজেলার অর্ন্তগত তালেব মোহাম্মদের হাট (বামনী) নামকস্থানে পাকমিলিশিয়া, রাজাকার ক্যাম্প আক্রমন ও যুদ্ধ পরিচালনার সময় যুদ্ধরত অবস্থায় তিনি শাহাদাত বরণ করেন।

পরদিন বর্তমান বামনী কলেজের নিকটবর্তী স্থান থেকে বীর মুক্তিযোদ্ধাগণ তাঁর মরদেহ উদ্ধার করে বর্তমান কবিরহাট উপজেলার অর্ন্তগত লামছিপ্রসাদ গ্রামে পশ্চিম তাকিয়া মসজিদ সংলগ্ন কবরস্থানে সমাহিত করেন।

অত্যান্ত দুঃখের বিষয় নোয়াখালী জেলা প্রশাসন কর্তৃক নির্মিত মাইজদী শহীদ মিনার সংলগ শহীদ বীর মুক্তিযোদ্ধা স্মৃতিফলকে এই শহীদ বীর মুক্তিযোদ্ধার নাম নেই। এ নিয়ে তার সাথী বীর মুক্তিযোদ্ধারা ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন।

শহীদ অহিদুর রহমান অদুদ ১৯৪৯ সালে নোয়াখালী শহরের ল’ইয়ার্স কলোনীতে জন্মগ্রহণ করেন এবং ওই এলাকাতেই তিনি বেড়ে উঠেন। তাঁর প্রয়াত বাবা মরহুম মুজিবুর রহমান মোক্তার ছিলেন একজন স্বনামধন্য আইনজিবী। তিনি ১৯৪৬ সালে অবিভক্ত বাংলার গণপরিষদ সদস্য এবং ১৯৫৪ সালে যুক্তফ্রন্টের নির্বাচিত তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তান প্রাদেশিক আইন সভার সদস্য (এম.এল.এ) ছিলেন।

বীর মুক্তিযোদ্ধা শহীদ অহিদুর রহমান ১৯৭০ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদের (ডাকসু) প্রত্যক্ষ ভোটে নির্বাচিত সমাজসেবা সম্পাদক ছিলেন। এই বীর মুক্তিযোদ্ধা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়া অবস্থায় ৬ দফা আন্দোলন, ৬৯ এর গণঅভ্যুত্থান, ছাত্রসমাজের ১১ দফা আন্দোলনে সক্রিয় ভূমিকা পালন করেন। তৎকালীন সময়ে বিভিন্ন আন্দোলন সংগ্রামে তাঁর বিশেষ ভূমিকার কারণে তিনি সকলের নিকট সুপরিচিত ছিলেন।

১৯৭০ সালের প্রলয়ংকরী ঘুর্ণিঝড় পরবর্তী উদ্ধার ও ত্রাণকাজ, ৭০ এর নির্বাচন এবং তৎপরবর্তী অসহযোগ আন্দোলন ও মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণসহ অসামান্য অবদানের জন্য তিনি ছাত্র-যুবসমাজ ও সাধারণ লোকের নিকট সমাদৃত ছিলেন।

শহীদ অদুদ পিতৃ পরিচয়ের সুবাদে রাজনীতি সংশ্লিষ্টতার কারণে বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াকালে বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে মাঝে মধ্যে দেখা করতেন। ছাত্রজীবন থেকে তিনি বাঙ্গালী জাতীয়তা, শোষনমুক্ত গণতান্ত্রিক সমাজ ব্যবস্থা ও অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশের স্বপ্ন দেখতেন।

জেলা প্রশাসন কর্তৃক নির্মিত মুক্তিযোদ্ধা বেদীতে এই বীর মুক্তিযোদ্ধার নাম দৃম্যমান করে স্মৃতিফলকে উৎকীর্ণ করে যথাযথ সম্মান প্রদর্শন করবেন এটাই সকল মুক্তিযোদ্ধার প্রত্যাশা।

শহীদ অহিদুর রহমান অদুদ স্মৃতি সংসদের সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা মো. শাহআলম জানান, তার বীরত্ব গাঁথা ও ইতিহাস নতুন প্রজন্মের কাছে তুলে ধরার জন্যই এই স্মৃতিসংসদ প্রতিষ্ঠা করি।

তিনি বলেন, যেহেতু বীর মুক্তিযোদ্ধা শহীদ অহিদুর রহমান বর্তমান বামনী কলেজের নিকটবর্তী স্থানে যুদ্ধে শাহাদাত বরণ করেছেন সেহেতু নোয়াখালীর মুক্তিযোদ্ধাগণ মুক্তিযুদ্ধে তাঁর অবদানের স্বীকৃতি স্বরূপ তাঁর স্মৃতি স্মরনীয় করে রাখার জন্য বামনী কলেজের নাম তাঁহার নামে নামকরণের দাবি জানাচ্ছি।

এছাড়া শহীদ অদুদের সমাধিস্থলে প্রতিষ্ঠিত ‘শহীদ অহিদুর রহমান স্মৃতি সংসদ’ এলাকায় সরাকারিভাবে একটি পাঠাগার ও মিলনায়তন এবং স্মৃতিস্তম্ভ নির্মাণের জন্য সরকারের দৃষ্টি আকর্ষন করা হয়।

নিউজটি শেয়ার করুন

নোয়াখালীর কবিরহাট

শহীদ বীর মুক্তিযোদ্ধা অহিদুর রহমান অদুদের ৫২তম মৃত্যুবার্ষিকী পালিত

আপডেট সময় ০৮:০০:৫৯ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ২১ নভেম্বর ২০২৩

নোয়াখালীর কবিরহাটে শহীদ বীর মুক্তিযোদ্ধা অহিদুর রহমান অদুদের ৫২তম শাহাদাৎ বার্ষিকী পালিত হয়েছে। মঙ্গলবার (২১ নভেম্বর) শহীদের সমাধিস্থল ধানশালিক ইউনিয়নের লামছিপ্রসাদ তাকিয়া বাজারে ওই কর্মসূচি পালিত হয়।

শহীদ বীর মুক্তিযোদ্ধা অহিদুর রহমান অদুদ স্মৃতি সংসদের উদ্যোগে আয়োজিত অনুষ্ঠানে কবর জিয়ারত, আলোচনা সভা, মিলাদ ও দোয়ার মাহফিলের আয়োজন করা হয়।

এসময় শহীদ বীর মুক্তিযোদ্ধা অহিদুর রহমান অদুদ স্মৃতি সংসদের সভাপতি বিশিষ্ট সমাজসেবক ও বীর মুক্তিযোদ্ধা মো. শাহআলমের সভাপতিত্বে এলাকার বীর মুক্তিযোদ্ধা, বিশিষ্ট নাগরিকসহ সংগঠনের সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন। তারা শহীদ অদুদের আত্মার মাগফিরাত কামনা করে বক্তব্য রাখেন।

সংগঠন সূত্রে জানা গেছে, শহীদ অদুদ মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন সময় বাংলাদেশ লিভারেশান ফোর্সের (বি.এল.এফ) অবিভক্ত সদর থানার অধিনায়ক ছিলেন। ১৯৭১ সালের ২১ নভেম্বর কোম্পানীগঞ্জ উপজেলার অর্ন্তগত তালেব মোহাম্মদের হাট (বামনী) নামকস্থানে পাকমিলিশিয়া, রাজাকার ক্যাম্প আক্রমন ও যুদ্ধ পরিচালনার সময় যুদ্ধরত অবস্থায় তিনি শাহাদাত বরণ করেন।

পরদিন বর্তমান বামনী কলেজের নিকটবর্তী স্থান থেকে বীর মুক্তিযোদ্ধাগণ তাঁর মরদেহ উদ্ধার করে বর্তমান কবিরহাট উপজেলার অর্ন্তগত লামছিপ্রসাদ গ্রামে পশ্চিম তাকিয়া মসজিদ সংলগ্ন কবরস্থানে সমাহিত করেন।

অত্যান্ত দুঃখের বিষয় নোয়াখালী জেলা প্রশাসন কর্তৃক নির্মিত মাইজদী শহীদ মিনার সংলগ শহীদ বীর মুক্তিযোদ্ধা স্মৃতিফলকে এই শহীদ বীর মুক্তিযোদ্ধার নাম নেই। এ নিয়ে তার সাথী বীর মুক্তিযোদ্ধারা ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন।

শহীদ অহিদুর রহমান অদুদ ১৯৪৯ সালে নোয়াখালী শহরের ল’ইয়ার্স কলোনীতে জন্মগ্রহণ করেন এবং ওই এলাকাতেই তিনি বেড়ে উঠেন। তাঁর প্রয়াত বাবা মরহুম মুজিবুর রহমান মোক্তার ছিলেন একজন স্বনামধন্য আইনজিবী। তিনি ১৯৪৬ সালে অবিভক্ত বাংলার গণপরিষদ সদস্য এবং ১৯৫৪ সালে যুক্তফ্রন্টের নির্বাচিত তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তান প্রাদেশিক আইন সভার সদস্য (এম.এল.এ) ছিলেন।

বীর মুক্তিযোদ্ধা শহীদ অহিদুর রহমান ১৯৭০ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদের (ডাকসু) প্রত্যক্ষ ভোটে নির্বাচিত সমাজসেবা সম্পাদক ছিলেন। এই বীর মুক্তিযোদ্ধা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়া অবস্থায় ৬ দফা আন্দোলন, ৬৯ এর গণঅভ্যুত্থান, ছাত্রসমাজের ১১ দফা আন্দোলনে সক্রিয় ভূমিকা পালন করেন। তৎকালীন সময়ে বিভিন্ন আন্দোলন সংগ্রামে তাঁর বিশেষ ভূমিকার কারণে তিনি সকলের নিকট সুপরিচিত ছিলেন।

১৯৭০ সালের প্রলয়ংকরী ঘুর্ণিঝড় পরবর্তী উদ্ধার ও ত্রাণকাজ, ৭০ এর নির্বাচন এবং তৎপরবর্তী অসহযোগ আন্দোলন ও মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণসহ অসামান্য অবদানের জন্য তিনি ছাত্র-যুবসমাজ ও সাধারণ লোকের নিকট সমাদৃত ছিলেন।

শহীদ অদুদ পিতৃ পরিচয়ের সুবাদে রাজনীতি সংশ্লিষ্টতার কারণে বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াকালে বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে মাঝে মধ্যে দেখা করতেন। ছাত্রজীবন থেকে তিনি বাঙ্গালী জাতীয়তা, শোষনমুক্ত গণতান্ত্রিক সমাজ ব্যবস্থা ও অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশের স্বপ্ন দেখতেন।

জেলা প্রশাসন কর্তৃক নির্মিত মুক্তিযোদ্ধা বেদীতে এই বীর মুক্তিযোদ্ধার নাম দৃম্যমান করে স্মৃতিফলকে উৎকীর্ণ করে যথাযথ সম্মান প্রদর্শন করবেন এটাই সকল মুক্তিযোদ্ধার প্রত্যাশা।

শহীদ অহিদুর রহমান অদুদ স্মৃতি সংসদের সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা মো. শাহআলম জানান, তার বীরত্ব গাঁথা ও ইতিহাস নতুন প্রজন্মের কাছে তুলে ধরার জন্যই এই স্মৃতিসংসদ প্রতিষ্ঠা করি।

তিনি বলেন, যেহেতু বীর মুক্তিযোদ্ধা শহীদ অহিদুর রহমান বর্তমান বামনী কলেজের নিকটবর্তী স্থানে যুদ্ধে শাহাদাত বরণ করেছেন সেহেতু নোয়াখালীর মুক্তিযোদ্ধাগণ মুক্তিযুদ্ধে তাঁর অবদানের স্বীকৃতি স্বরূপ তাঁর স্মৃতি স্মরনীয় করে রাখার জন্য বামনী কলেজের নাম তাঁহার নামে নামকরণের দাবি জানাচ্ছি।

এছাড়া শহীদ অদুদের সমাধিস্থলে প্রতিষ্ঠিত ‘শহীদ অহিদুর রহমান স্মৃতি সংসদ’ এলাকায় সরাকারিভাবে একটি পাঠাগার ও মিলনায়তন এবং স্মৃতিস্তম্ভ নির্মাণের জন্য সরকারের দৃষ্টি আকর্ষন করা হয়।