সপ্তম ধাপের ইউপি নির্বাচন
সেতুমন্ত্রীর তিন ভাগনের বিপরীতে কাদের মির্জার প্রার্থী যারা
- আপডেট সময় ০১:১৮:৪৩ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ২৫ জানুয়ারী ২০২২
- / ১৫৪৪ বার পড়া হয়েছে
(বাম দিক থেকে) সেতুমন্ত্রীর তিন ভাগনে মাহবুবুর রশিদ মঞ্জু, সিরাজিস সালেকিন রিমন ও জায়দল হক কচি। কাদের মির্জা সমর্থিত প্রার্থী মোজাম্মেল হোসেন কামরুল, ইকবাল বাহার চৌধুরী ও জামাল উদ্দিন লিটন।
নোয়াখালীর কোম্পানীগঞ্জে ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরের তিন ভাগনের বিপরীতে লড়ছেন মেয়র কাদের মির্জা সমর্থিত প্রার্থী বর্তমান তিন চেয়ারম্যান।
একদিকে মন্ত্রীর ভাগনে, অপরদিকে তাঁদেরই আরেক আপন মামা বসুরহাট পৌরসভার মেয়র কাদের মির্জা সমর্থিত প্রার্থী পরস্পরের প্রতিদ্বন্দ্বী হওয়া নিয়ে ব্যাপক আলোচনা চলছে উপজেলায়।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, সপ্তম ধাপে অনুষ্ঠেয় ইউপি নির্বাচনে সেতুমন্ত্রীর তিন ভাগনে উপজেলার তিন ইউনিয়নে চেয়ারম্যান পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন।
তাঁদের মধ্যে ২ নম্বর চরপার্বতী ইউনিয়নে চেয়ারম্যান প্রার্থী হয়েছেন কোম্পানীগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের মুখপাত্র এবং উপজেলা ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক মাহবুবুর রশিদ মঞ্জু।
৬ নম্বর রামপুর ইউনিয়নে চেয়ারম্যান প্রার্থী রামপুর ইউনিয়ন ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি সিরাজিস সালেকিন রিমন।
আর ৫ নম্বর চরফকিরা ইউনিয়নে চেয়ারম্যান প্রার্থী হয়েছেন উপজেলা ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি জায়দল হক কচি।
মঞ্জু ও রিমন মন্ত্রীর আপন ভাগনে, আর কচি মন্ত্রীর ফুফাতো বোনের ছেলে। তিনজনেরই নির্বাচনী প্রতীক আনারস। মন্ত্রীর তিন ভাগনে ভোটের ময়দানে এবারই প্রথম।
এরা সবাই এক সময় মেয়র আবদুল কাদের মির্জার অনুসারীই ছিলেন। তবে গত বছরের ১৬ জানুয়ারি অনুষ্ঠিত বসুরহাট পৌরসভা নির্বাচন পরবর্তী স্থানীয় রাজনৈতিক বিভাজনে তাঁরা এখন কাদের মির্জার ঘোরতর প্রতিপক্ষ। তাঁরা তিনজনই উপজেলা আওয়ামী লীগ ও সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান মিজানুর রহমান বাদলের অনুসারী।
চরপার্বতী ইউপিতে সেতুমন্ত্রীর ভাগনে মাহবুবুর রশিদ মঞ্জুর প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী মেয়র কাদের মির্জা সমর্থিত বর্তমান চেয়ারম্যান উপজেলা আওয়ামী লীগের ক্রীড়া সম্পাদক মোজাম্মেল হোসেন কামরুল। তাঁর নির্বাচনী প্রতীক টেলিফোন।
এ ইউনিয়নে অপর হেভিওয়েট প্রার্থী কাজী হানিফ। তাঁর নির্বাচনী প্রতীক মোটরসাইকেল। কাজী হানিফ বিগত দুইবার দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ভোট পেয়েছিলেন। সব মিলিয়ে ত্রিমুখী হাড্ডাহাড্ডি লড়াই হবে বলে মনে করেন সাধারণ ভোটাররা।
এ প্রসঙ্গে ২ নম্বর ওয়ার্ডের ভোটার উপজেলা যুবলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক জুলফিকার হায়দার মোহন বলেন, ‘একজন দক্ষ সংগঠক মঞ্জু ভাই। তা ছাড়া তিনি মন্ত্রীর ভাগনে হওয়ায় ইউনিয়নে ব্যাপক উন্নয়নকাজ করতে পারবেন। তাই ভোটাররা এবার তাঁর দিকেই ঝুঁকছে।’
ইউনিয়ন ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি মোতাহের হোসেন বাদল বলেন, ‘দু’বার ইউপি চেয়ারম্যান থেকে কামরুল ভাই বিভিন্ন উন্নয়নকাজ করেছেন। তাই জনগণ উন্নয়নের ধারাবাহিকতা বজায় রাখতে এবারও তাঁর পক্ষেই থাকবে।’
অপরদিকে বয়সে একেবারেই তরুণ সালেকিন রিমন, তিনি রামপুর ইউপিতে চেয়ারম্যান পদপ্রার্থী। এখানে তাঁরও প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী মেয়র কাদের মির্জা সমর্থিত বর্তমান চেয়ারম্যান ও ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি ইকবাল বাহার চৌধুরী। তাঁর নির্বাচনী প্রতীক মোটরসাইকেল।
বামনী উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আবু তাহের দুলাল জানান, এলাকার যুব সমাজকে ঐক্যবদ্ধ করার পাশাপাশি মার্জিত আচরণের কারণে বয়োবৃদ্ধ ভোটারদেরও প্রথম পছন্দ রিমন।
অপরদিকে স্থানীয় ভোটার প্রগতি গ্রন্থাগারের সভাপতি হেদায়েত উল্যা বলেন, ‘চেয়ারম্যান হওয়ার আগে আমেরিকা থাকায় প্রচুর অর্থবিত্তের মালিক হয়েছেন ইকবাল বাহার। নির্লোভ চেয়ারম্যান হিসেবে তাঁর খ্যাতি রয়েছে।’
৫ নম্বর চরফকিরা ইউনিয়নে প্রার্থী মন্ত্রীর ফুফাতো বোনের ছেলে জায়দল হক কচি উপজেলা ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি এবং একজন প্রতিষ্ঠিত ব্যবসায়ী। এখানে তাঁর প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী বর্তমান চেয়ারম্যান এবং উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক জামাল উদ্দিন লিটন। তাঁর নির্বাচনী প্রতীক মোটরসাইকেল।
কচি বয়সে তরুণ। তাঁর বিপরীতে প্রবীণ লিটন। নবীন প্রবীণের মাঝেও হাড্ডাহাড্ডি লড়াইয়ের আভাস পাওয়া যাচ্ছে।
এ প্রসঙ্গে চরফকিরা ইউপির ভোটার মাসুদুর রহমান মিল্টন বলেন, ‘নির্বাচনে প্রার্থী হওয়ার কথা মাথায় রেখেই গত তিন বছর এলাকায় নিয়মিত কার্যক্রম পরিচালনা করে আসছেন কচি ভাই। তা ছাড়া জনপ্রিয় সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান মিজানুর রহমান বাদলের সমর্থন কচির বিজয়ের পথকে আরও সুগম করবে।’
তবে সাধারণ ভোটাররা বলছেন, ভোটের সমীকরণে সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান মিজানুর রহমান বাদলের বড়ভাই সলিম উল্যাহ টেলু চশমা প্রতীক নিয়ে চমক দেখাতে পারেন।
আগামী ৭ ফেব্রুয়ারি উপজেলার আটটি ইউনিয়নে ভোট গ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে। তবে কোম্পানীগঞ্জের চলমান অভ্যন্তরীণ বিরোধের কারণে এখানে কোনো প্রার্থীকে নৌকা প্রতীক দেয়নি ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগ।