নোয়াখালী ০৪:০২ অপরাহ্ন, রবিবার, ০৫ মে ২০২৪, ২২ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

কানের খইল কী ও কীভাবে তৈরি হয়?

ডিজিটাল নোয়াখালী ডেস্ক :
  • আপডেট সময় ১০:০৬:৪৬ অপরাহ্ন, বুধবার, ২৬ জানুয়ারী ২০২২
  • / ৪৯৪ বার পড়া হয়েছে

কানের খইল কালচে বাদামি রংয়ের ময়লা বিশেষ। যা প্রাকৃতিক উপায়ে কমবেশি সবার কানেই তৈরি হয়৷ আমাদের বর্হিকর্নে চামড়ার গ্রন্থি নিঃসৃত রসের সাথে চামড়ার ওপরের স্তর থেকে খসে যাওয়া কোষ সমূহ ও ধুলাবালির মিশ্রণেই খইল তৈরি হয়৷

সিরামিনাস গ্রন্থি পাতলা পানির মতো আর সিবাসিয়াস গ্রন্থি তৈলাক্ত জাতীয় পদার্থ তৈরি করে। আর এই দুই রসের অনুপাত হারে খইল শক্ত নরম হয়৷

কানের খইল আমাদের কিছু উপকারও করে- এর উপাদান গ্রন্থিরস কানে রোগজীবাণু জন্মাতে বা প্রবেশ করাকে প্রতিরোধ করে। প্রাকৃতিক উপায়ে কানে ধুলা ময়লা বা পোকা মাকড় প্রবেশ করতে দেয় না৷

তাই সাধারণভাবে সমস্যা না হলে ওয়াক্স পরিষ্কার করার দরকার নেই৷ কথা বলা, খাওয়া ইত্যাদি কাজে মুখের চোয়ালের নড়াচড়ায় হালকা খইল বাইরে চলে আসে।

তবে কারও কারও ক্ষেত্রে দেখা যায়, ওয়াক্স জমে জমে কানের ছিদ্রপথ আটকে সমস্যার সৃষ্টি করে, এমনটি বেশি দেখা যায়-

ক)বাচ্চাদের বিশেষ করে যারা বেশি ঠান্ডা, সর্দিকাশিতে ভোগে৷
খ) যাদের কানে তৈলাক্ত নিঃসরণ কম।
গ) চমড়ার ওপরের স্তর ক্ষয়ে যায় বা চর্মরোগে ভোগেন যারা৷
ঘ) বয়স্কদের কানে শক্ত মোটা পশমও খইল আটকে রাখতে পারে৷
ঙ) যাদের বর্হিকর্ন পথ সরু বা হাড় প্রবৃদ্ধি থাকে৷
চ) যারা ধুলাবালি বা গরম পরিবেশে থাকেন ইত্যাদি৷

উপসর্গ

> বধিরতা- নতুন সাতার কাটা বা কানে পানি গেলে ওয়াক্স ভিজে ভিজে আয়তনে বেড়ে গিয়ে কানের ছিদ্র পুরো বন্ধ হলে হঠাৎ কম শোনা৷

> কানে অস্বস্থি বোধ ও চুলকানি হওয়া৷

> কানে ব্যথা- খইল অনেকদিন আটকে থাকলে বর্হিকর্নে প্রদাহ ক্ষত হয়ে অসহ্য ব্যথা বাড়তে পারে৷

> কানের পর্দার ওপর ময়লা চাপ দিতে থাকলে অস্বাভাবিক শব্দ বা মাথা ঘুরতে পারে৷

> কান থেকে তরল কালচে বাদামি পদার্থ বের হতে পারে।

চিকিৎসা

> শিশুদের ক্ষেত্রে মায়েরাই কটনবাড দিয়ে আলোতে বসে কানের নরম খইল পরিষ্কার করে দিতে পারেন৷ ঘুমানো অবস্থায় তা করা ঠিক হবে না, হঠাৎ করে শিশু মাথা ঝাঁকালে বিপত্তি হতে পারে৷

> যাদের বেশি খইল জমে তাদের কানে মাঝে মাঝে অলিভ অয়েল অথবা বেবি অয়েল দিলে পরিষ্কার করতে সুবিধা হয়৷

> বিভিন্ন রাসয়নিক মিশ্রিত সরিসার তেল, হাইড্রজেন পারঅক্সাইড সংবেদনশীল কানে ব্যবহার না করাই শ্রেয়৷

> রাস্তা-ঘাটে হাতুড়ে চিকিৎসক দ্বারা কান পরিষ্কার করাবেন না। অপরিষ্কার যন্ত্র ব্যবহারে সেক্ষেত্রে ছত্রাক প্রদাহ, পাতলা চামড়ায় আচড় থেকে জীবাণু প্রদাহে কান চুলকানো, ব্যথা, পানি পরা সমস্যা হতে পারে৷

> কানের সমস্যা দেখা দিলে ইএনটি বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নেওয়া উচিত। তিনি কানে আলো ফেলে খইল পরিষ্কারে প্রয়োজন হলে- প্রোব, হুক, ফরসেপ, সাকার বা কুসুম গরম পানির পিচকারি ব্যবহার করতে পারেন৷

> কানে ব্যথা প্রদাহ থাকলে ব্যথানাশক, অ্যান্টিবায়োটিক আবার সর্দি ঠান্ডা থাকলে অ্যান্টিহিস্টামিন বা নাকের ড্রপ দরকার হতে পারে৷

> খইল শুকনো ও শক্ত হলে কয়েক দিন অলিভ অয়েল, ওয়াক্সসল বা সোডিব ব্যবহারে তা নরম/তরল করে নেওয়া হয়৷

> অবস্থা বুঝে আবার ওটিতে স্বল্প সময়ের জন্য অজ্ঞান করেও কানের ময়লা বের করার প্রয়োজন হতে পারে৷

অনেকের কান পরিষ্কার করতে গিয়ে মাথা ঘুরানো বা সাময়িক অজ্ঞান হতে পারেন। এটা হয় ভেগাস স্নায়ুর শাখার সঙ্গে কানের সংযোগ থাকায়৷

লেখক: নাক, কান ও গলা বিশেষজ্ঞ, ইবনে সিনা হাসপাতাল, ঢাকেশ্বরী শাখা, ঢাকা।

নিউজটি শেয়ার করুন

কানের খইল কী ও কীভাবে তৈরি হয়?

আপডেট সময় ১০:০৬:৪৬ অপরাহ্ন, বুধবার, ২৬ জানুয়ারী ২০২২

কানের খইল কালচে বাদামি রংয়ের ময়লা বিশেষ। যা প্রাকৃতিক উপায়ে কমবেশি সবার কানেই তৈরি হয়৷ আমাদের বর্হিকর্নে চামড়ার গ্রন্থি নিঃসৃত রসের সাথে চামড়ার ওপরের স্তর থেকে খসে যাওয়া কোষ সমূহ ও ধুলাবালির মিশ্রণেই খইল তৈরি হয়৷

সিরামিনাস গ্রন্থি পাতলা পানির মতো আর সিবাসিয়াস গ্রন্থি তৈলাক্ত জাতীয় পদার্থ তৈরি করে। আর এই দুই রসের অনুপাত হারে খইল শক্ত নরম হয়৷

কানের খইল আমাদের কিছু উপকারও করে- এর উপাদান গ্রন্থিরস কানে রোগজীবাণু জন্মাতে বা প্রবেশ করাকে প্রতিরোধ করে। প্রাকৃতিক উপায়ে কানে ধুলা ময়লা বা পোকা মাকড় প্রবেশ করতে দেয় না৷

তাই সাধারণভাবে সমস্যা না হলে ওয়াক্স পরিষ্কার করার দরকার নেই৷ কথা বলা, খাওয়া ইত্যাদি কাজে মুখের চোয়ালের নড়াচড়ায় হালকা খইল বাইরে চলে আসে।

তবে কারও কারও ক্ষেত্রে দেখা যায়, ওয়াক্স জমে জমে কানের ছিদ্রপথ আটকে সমস্যার সৃষ্টি করে, এমনটি বেশি দেখা যায়-

ক)বাচ্চাদের বিশেষ করে যারা বেশি ঠান্ডা, সর্দিকাশিতে ভোগে৷
খ) যাদের কানে তৈলাক্ত নিঃসরণ কম।
গ) চমড়ার ওপরের স্তর ক্ষয়ে যায় বা চর্মরোগে ভোগেন যারা৷
ঘ) বয়স্কদের কানে শক্ত মোটা পশমও খইল আটকে রাখতে পারে৷
ঙ) যাদের বর্হিকর্ন পথ সরু বা হাড় প্রবৃদ্ধি থাকে৷
চ) যারা ধুলাবালি বা গরম পরিবেশে থাকেন ইত্যাদি৷

উপসর্গ

> বধিরতা- নতুন সাতার কাটা বা কানে পানি গেলে ওয়াক্স ভিজে ভিজে আয়তনে বেড়ে গিয়ে কানের ছিদ্র পুরো বন্ধ হলে হঠাৎ কম শোনা৷

> কানে অস্বস্থি বোধ ও চুলকানি হওয়া৷

> কানে ব্যথা- খইল অনেকদিন আটকে থাকলে বর্হিকর্নে প্রদাহ ক্ষত হয়ে অসহ্য ব্যথা বাড়তে পারে৷

> কানের পর্দার ওপর ময়লা চাপ দিতে থাকলে অস্বাভাবিক শব্দ বা মাথা ঘুরতে পারে৷

> কান থেকে তরল কালচে বাদামি পদার্থ বের হতে পারে।

চিকিৎসা

> শিশুদের ক্ষেত্রে মায়েরাই কটনবাড দিয়ে আলোতে বসে কানের নরম খইল পরিষ্কার করে দিতে পারেন৷ ঘুমানো অবস্থায় তা করা ঠিক হবে না, হঠাৎ করে শিশু মাথা ঝাঁকালে বিপত্তি হতে পারে৷

> যাদের বেশি খইল জমে তাদের কানে মাঝে মাঝে অলিভ অয়েল অথবা বেবি অয়েল দিলে পরিষ্কার করতে সুবিধা হয়৷

> বিভিন্ন রাসয়নিক মিশ্রিত সরিসার তেল, হাইড্রজেন পারঅক্সাইড সংবেদনশীল কানে ব্যবহার না করাই শ্রেয়৷

> রাস্তা-ঘাটে হাতুড়ে চিকিৎসক দ্বারা কান পরিষ্কার করাবেন না। অপরিষ্কার যন্ত্র ব্যবহারে সেক্ষেত্রে ছত্রাক প্রদাহ, পাতলা চামড়ায় আচড় থেকে জীবাণু প্রদাহে কান চুলকানো, ব্যথা, পানি পরা সমস্যা হতে পারে৷

> কানের সমস্যা দেখা দিলে ইএনটি বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নেওয়া উচিত। তিনি কানে আলো ফেলে খইল পরিষ্কারে প্রয়োজন হলে- প্রোব, হুক, ফরসেপ, সাকার বা কুসুম গরম পানির পিচকারি ব্যবহার করতে পারেন৷

> কানে ব্যথা প্রদাহ থাকলে ব্যথানাশক, অ্যান্টিবায়োটিক আবার সর্দি ঠান্ডা থাকলে অ্যান্টিহিস্টামিন বা নাকের ড্রপ দরকার হতে পারে৷

> খইল শুকনো ও শক্ত হলে কয়েক দিন অলিভ অয়েল, ওয়াক্সসল বা সোডিব ব্যবহারে তা নরম/তরল করে নেওয়া হয়৷

> অবস্থা বুঝে আবার ওটিতে স্বল্প সময়ের জন্য অজ্ঞান করেও কানের ময়লা বের করার প্রয়োজন হতে পারে৷

অনেকের কান পরিষ্কার করতে গিয়ে মাথা ঘুরানো বা সাময়িক অজ্ঞান হতে পারেন। এটা হয় ভেগাস স্নায়ুর শাখার সঙ্গে কানের সংযোগ থাকায়৷

লেখক: নাক, কান ও গলা বিশেষজ্ঞ, ইবনে সিনা হাসপাতাল, ঢাকেশ্বরী শাখা, ঢাকা।