নোয়াখালী ০৪:৪৭ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ৮ পৌষ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

অর্থ আত্মসাত

নোয়াখালী মেডিকেলের সাবেক অধ্যক্ষের বিরুদ্ধে দুদকের মামলা

নিজস্ব প্রতিবেদক
  • আপডেট সময় ০৬:৪৪:৩৭ অপরাহ্ন, বুধবার, ৯ অক্টোবর ২০২৪
  • / ১২৭৩ বার পড়া হয়েছে

সাবেক অধ্যক্ষ ডা. মো. আবদুস ছালাম।

নোয়াখালী আবদুল মালেক উকিল মেডিকেল কলেজের (আমাউমেক) সাবেক অধ্যক্ষ অধ্যাপক ডা. মো. আবদুস ছালামসহ দুইজনের বিরুদ্ধে সরকারি আট কোটি ৫৯ লাখ ১৭ হাজার ৭৯২ টাকা আত্মসাতের দায়ে মামলা দায়ের করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।

মঙ্গলবার (৮ অক্টোবর) দুদকের সমন্বিত নোয়াখালী জেলা কার্যালয়ের উপ-পরিচালক মো. ফারুক আহমেদ বাদি হয়ে মামলাটি দায়ের করেন। পরে তিনি মামলার বিষয়টি ডিজিটাল নোয়াখালীকে নিশ্চিত করেন।

মামলায় অপর আসামি হলেন, ঢাকার মোহাম্মদপুর খিলজি রোড এলাকার ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান নির্ঝরা এন্টারপ্রাইজের মালিক আফসানা ইসলাম। তিনি নড়াইল জেলার লোহাগড়া থানার কামারগ্রাম এলাকার মাহাবুবুল ইসলামের স্ত্রী। বর্তমানে তিনি ঢাকার শ্যামলী এলাকার পিসি কালচার হাউজিং সোসাইটির বাসিন্দা।

মামলার এজাহার সূত্রে জানা গেছে, ২০১৫-১৬ অর্থবছরে আবদুল মালেকে উকিল মেডিকেল কলেজের সাবেক অধ্যক্ষ অধ্যাপক ডা. আবদুস সালাম বাজারদর গোপন করে ১৭ হাজার ৯৮০ বর্গফুট সিলিংয়ের কাজে প্রতি বর্গফুট পাঁচ হাজার ৯৫০ টাকা করে মোট ১০ কোটি ৬৯ লাখ ৮১ হাজার টাকা নির্ঝরা এন্টারপ্রাইজকে পরিশোধ করেন। এতে এক কোটি ৭২ লাখ ছয় হাজার ৮৫৮ টাকা ভ্যাট ও আয়কর কর্তন করে ঠিকাদার পায় আট কোটি ৯৭ লাখ ৭৪ হাজার ১৪২ টাকা।

দুদক অনুসন্ধান করে জানতে পারে, গণপূর্ত বিভাগের দর অনুযায়ী উক্ত কাজের প্রতি বর্গফুটে খরচ লাগে ২১৪.৪৮ টাকা। এতে ১৭ হাজার ৯৮০ বর্গফুট সিলিংয়ের কাজে ব্যয় হওয়ার কথা ৩৮ লাখ ৫৬ হাজার ৩৫০ টাকা। ফলে সাবেক অধ্যক্ষ অধ্যাপক ডা. আবদুস ছালাম ও ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের মালিক আফসানা ইসলাম পরস্পরের যোগসজশে অবৈধভাবে আর্থিক লাভবানের আশায় অতিরিক্ত বাজারদর দেখিয়ে সিলিংয়ের কাজে সরকারি অতিরিক্ত আট কোটি ৫৯ লাখ ১৭ হাজার ৭৯২ টাকা আত্মসাতের প্রমাণ মেলে।

দুদকের নোয়াখালী কার্যালয়ে সহকারী পরিচালক আব্দুল্লাহ আল নোমান বলেন, মঙ্গলবার (৮ অক্টোবর) বিকেলে বাদির লিখিত অভিযোগ পেয়ে দণ্ডবিধির ৪০৯, ৪২০, ৪৬৭, ৪৬৮, ৪৭১, ১০৯ ধারাসহ ১৯৪৭ সালের দুর্নীতি প্রতিরোধ আইনের ৫(২) ধারায় দুই আসামির বিরুদ্ধে নিয়মিত মামলা (নম্বর-২) রুজু করা হয়েছে।

দুদকের নোয়াখালীর উপ-পরিচালক মো. ফারুক আহমেদ বলেন, অনুসন্ধানে দেখা যায়, নির্মাণ করা সিলিং ডেকোরেশনের কাজটি প্রকৌশলীয় নির্মাণকাজ হলেও অসৎ উদ্দেশ্যে আবদুল মালেক উকিল মেডিকেল কলেজ কর্তৃপক্ষ তা ফার্ণিচার গ্রুপে অন্তর্ভুক্ত করে দরপত্র আহ্বান করে। যাতে বর্তমানে অবসরপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ ডা. আবদুস ছালাম দরপত্র আহ্বান কমিটির সভাপতি হিসেবে সরাসরি যুক্ত।

তিনি আরও বলেন, এছাড়াও তৎকালীন অধ্যক্ষ ডা. আবদুস ছালামের চাপে দরপত্র মূল্যায়ন কমিটি কোনরূপ যাচাই বাছাই না করে কিংবা কোনরূপ নোট অব ডিসেন্ট না দিয়ে প্রকৌশল সংক্রান্ত নির্মাণ কাজের বিষয়টি অনিয়মতান্ত্রিকভাবে অনুমোদন দিয়েছেন। তদন্তে অন্য কারো সংশ্লিষ্টতা পাওয়া গেলে তাদেরও আসামির তালিকায় যুক্ত করা হবে।

খবর নিয়ে জানা গেছে, অধ্যক্ষ ডা. মো. আবদুস ছালাম ২০০৯ সালের ১৫ অক্টোবর আমাউমেকে অধ্যক্ষ হিসেবে প্রথম যোগদান করে ৮৩ মাস চাকরী করে ২০১৬ সালের ২৪ সেপ্টেম্বর মানিকগঞ্জ কর্ণেল মালেক মেডিকেল কলেজে বদলী হন। পরে আবারো ২০১৮ সালের ২৭ সেপ্টেম্বর তিনি আবদুল মালেক মেডিকেলে অধ্যক্ষ হিসেবে যোগদান করেন।

এদিকে ২০১৯ সালের ৩০ এপ্রিল তার বয়সসীমা শেষে অবসরে যাওয়ার কথা থাকলেও তিনি প্রথম দফায় ২০২১ সালের ৩০ এপ্রিল পর্যন্ত দুই বছর ও দ্বিতীয় দফায় গত ৩০ এপ্রিল পর্যন্ত আরও তিন বছরের জন্য চুক্তি ভিত্তিক নিয়োগ পান। এর মধ্যে তার বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ উঠে।

২০২৩ সালের মে মাসে অধ্যক্ষ ডা. মো. আবদুস ছালামের বিরুদ্ধে দুর্নীতি অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ার পর তাকে দায়িত্ব ছেড়ে দেওয়ার নির্দেশ দেন মন্ত্রণালয়। তিনি ওই আদেশের বিরুদ্ধে উচ্চ আদালতে রিট করে মেয়াদ শেষ করার অনুমতি পান। এ মেয়াদ শেষেও তিনি পুনরায় চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ পেতে বিভিন্ন দফতরে দৌঁড়ঝাপ করেন।

পরে গত ৯ জুন স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের স্বাস্থ্য শিক্ষা ও পরিবার কল্যাণ বিভাগের উপসচিব শারমিন ইয়াসমিনের সই করা চিঠিতে তার চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ বাতিল করে নতুন অধ্যক্ষ নিয়োগ দেওয়া হয়। মামলার বিষয়ে জানতে অধ্যক্ষ ডা. আবদুস ছালামকে বারবার ফোন দিলেও তিনি রিসিভ করেননি।

নিউজটি শেয়ার করুন

অর্থ আত্মসাত

নোয়াখালী মেডিকেলের সাবেক অধ্যক্ষের বিরুদ্ধে দুদকের মামলা

আপডেট সময় ০৬:৪৪:৩৭ অপরাহ্ন, বুধবার, ৯ অক্টোবর ২০২৪

নোয়াখালী আবদুল মালেক উকিল মেডিকেল কলেজের (আমাউমেক) সাবেক অধ্যক্ষ অধ্যাপক ডা. মো. আবদুস ছালামসহ দুইজনের বিরুদ্ধে সরকারি আট কোটি ৫৯ লাখ ১৭ হাজার ৭৯২ টাকা আত্মসাতের দায়ে মামলা দায়ের করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।

মঙ্গলবার (৮ অক্টোবর) দুদকের সমন্বিত নোয়াখালী জেলা কার্যালয়ের উপ-পরিচালক মো. ফারুক আহমেদ বাদি হয়ে মামলাটি দায়ের করেন। পরে তিনি মামলার বিষয়টি ডিজিটাল নোয়াখালীকে নিশ্চিত করেন।

মামলায় অপর আসামি হলেন, ঢাকার মোহাম্মদপুর খিলজি রোড এলাকার ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান নির্ঝরা এন্টারপ্রাইজের মালিক আফসানা ইসলাম। তিনি নড়াইল জেলার লোহাগড়া থানার কামারগ্রাম এলাকার মাহাবুবুল ইসলামের স্ত্রী। বর্তমানে তিনি ঢাকার শ্যামলী এলাকার পিসি কালচার হাউজিং সোসাইটির বাসিন্দা।

মামলার এজাহার সূত্রে জানা গেছে, ২০১৫-১৬ অর্থবছরে আবদুল মালেকে উকিল মেডিকেল কলেজের সাবেক অধ্যক্ষ অধ্যাপক ডা. আবদুস সালাম বাজারদর গোপন করে ১৭ হাজার ৯৮০ বর্গফুট সিলিংয়ের কাজে প্রতি বর্গফুট পাঁচ হাজার ৯৫০ টাকা করে মোট ১০ কোটি ৬৯ লাখ ৮১ হাজার টাকা নির্ঝরা এন্টারপ্রাইজকে পরিশোধ করেন। এতে এক কোটি ৭২ লাখ ছয় হাজার ৮৫৮ টাকা ভ্যাট ও আয়কর কর্তন করে ঠিকাদার পায় আট কোটি ৯৭ লাখ ৭৪ হাজার ১৪২ টাকা।

দুদক অনুসন্ধান করে জানতে পারে, গণপূর্ত বিভাগের দর অনুযায়ী উক্ত কাজের প্রতি বর্গফুটে খরচ লাগে ২১৪.৪৮ টাকা। এতে ১৭ হাজার ৯৮০ বর্গফুট সিলিংয়ের কাজে ব্যয় হওয়ার কথা ৩৮ লাখ ৫৬ হাজার ৩৫০ টাকা। ফলে সাবেক অধ্যক্ষ অধ্যাপক ডা. আবদুস ছালাম ও ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের মালিক আফসানা ইসলাম পরস্পরের যোগসজশে অবৈধভাবে আর্থিক লাভবানের আশায় অতিরিক্ত বাজারদর দেখিয়ে সিলিংয়ের কাজে সরকারি অতিরিক্ত আট কোটি ৫৯ লাখ ১৭ হাজার ৭৯২ টাকা আত্মসাতের প্রমাণ মেলে।

দুদকের নোয়াখালী কার্যালয়ে সহকারী পরিচালক আব্দুল্লাহ আল নোমান বলেন, মঙ্গলবার (৮ অক্টোবর) বিকেলে বাদির লিখিত অভিযোগ পেয়ে দণ্ডবিধির ৪০৯, ৪২০, ৪৬৭, ৪৬৮, ৪৭১, ১০৯ ধারাসহ ১৯৪৭ সালের দুর্নীতি প্রতিরোধ আইনের ৫(২) ধারায় দুই আসামির বিরুদ্ধে নিয়মিত মামলা (নম্বর-২) রুজু করা হয়েছে।

দুদকের নোয়াখালীর উপ-পরিচালক মো. ফারুক আহমেদ বলেন, অনুসন্ধানে দেখা যায়, নির্মাণ করা সিলিং ডেকোরেশনের কাজটি প্রকৌশলীয় নির্মাণকাজ হলেও অসৎ উদ্দেশ্যে আবদুল মালেক উকিল মেডিকেল কলেজ কর্তৃপক্ষ তা ফার্ণিচার গ্রুপে অন্তর্ভুক্ত করে দরপত্র আহ্বান করে। যাতে বর্তমানে অবসরপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ ডা. আবদুস ছালাম দরপত্র আহ্বান কমিটির সভাপতি হিসেবে সরাসরি যুক্ত।

তিনি আরও বলেন, এছাড়াও তৎকালীন অধ্যক্ষ ডা. আবদুস ছালামের চাপে দরপত্র মূল্যায়ন কমিটি কোনরূপ যাচাই বাছাই না করে কিংবা কোনরূপ নোট অব ডিসেন্ট না দিয়ে প্রকৌশল সংক্রান্ত নির্মাণ কাজের বিষয়টি অনিয়মতান্ত্রিকভাবে অনুমোদন দিয়েছেন। তদন্তে অন্য কারো সংশ্লিষ্টতা পাওয়া গেলে তাদেরও আসামির তালিকায় যুক্ত করা হবে।

খবর নিয়ে জানা গেছে, অধ্যক্ষ ডা. মো. আবদুস ছালাম ২০০৯ সালের ১৫ অক্টোবর আমাউমেকে অধ্যক্ষ হিসেবে প্রথম যোগদান করে ৮৩ মাস চাকরী করে ২০১৬ সালের ২৪ সেপ্টেম্বর মানিকগঞ্জ কর্ণেল মালেক মেডিকেল কলেজে বদলী হন। পরে আবারো ২০১৮ সালের ২৭ সেপ্টেম্বর তিনি আবদুল মালেক মেডিকেলে অধ্যক্ষ হিসেবে যোগদান করেন।

এদিকে ২০১৯ সালের ৩০ এপ্রিল তার বয়সসীমা শেষে অবসরে যাওয়ার কথা থাকলেও তিনি প্রথম দফায় ২০২১ সালের ৩০ এপ্রিল পর্যন্ত দুই বছর ও দ্বিতীয় দফায় গত ৩০ এপ্রিল পর্যন্ত আরও তিন বছরের জন্য চুক্তি ভিত্তিক নিয়োগ পান। এর মধ্যে তার বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ উঠে।

২০২৩ সালের মে মাসে অধ্যক্ষ ডা. মো. আবদুস ছালামের বিরুদ্ধে দুর্নীতি অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ার পর তাকে দায়িত্ব ছেড়ে দেওয়ার নির্দেশ দেন মন্ত্রণালয়। তিনি ওই আদেশের বিরুদ্ধে উচ্চ আদালতে রিট করে মেয়াদ শেষ করার অনুমতি পান। এ মেয়াদ শেষেও তিনি পুনরায় চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ পেতে বিভিন্ন দফতরে দৌঁড়ঝাপ করেন।

পরে গত ৯ জুন স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের স্বাস্থ্য শিক্ষা ও পরিবার কল্যাণ বিভাগের উপসচিব শারমিন ইয়াসমিনের সই করা চিঠিতে তার চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ বাতিল করে নতুন অধ্যক্ষ নিয়োগ দেওয়া হয়। মামলার বিষয়ে জানতে অধ্যক্ষ ডা. আবদুস ছালামকে বারবার ফোন দিলেও তিনি রিসিভ করেননি।