নোয়াখালী ০৯:৫৩ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১৯ ডিসেম্বর ২০২৪, ৫ পৌষ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

প্রত্যাহারের দাবি

হাতিয়ায় প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে অনিয়ম-দুর্নীতির অভিযোগ

নিজস্ব প্রতিবেদক
  • আপডেট সময় ০১:০৩:৪৮ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২৬ অক্টোবর ২০২৩
  • / ১৩৮৯ বার পড়া হয়েছে

নোয়াখালীর দ্বীপ উপজেলা হাতিয়ায় ম্যাকপার্শ্বান সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক নুরুদ্দিন মো. তানভীরের বিরুদ্ধে অর্থ আত্মসাত, ঘুস বাণিজ্য, শিক্ষার্থীদের হাতুড়িপেটা ও নারী শিক্ষাকদের সঙ্গে অসৌজন্যমূলক আচরণের অভিযোগ উঠেছে।

এদিকে সুনির্দিষ্ট প্রমাণসহ উর্ধতন কর্মকর্তাদের কাছে অভিযোগ করার একমাস পরও অভিযুক্ত প্রধান শিক্ষক বহাল তবিয়তে থাকায় ফুঁসে উঠেছে এলাকাবাসী ও অভিভাবকরা। হাতিয়ে নেওয়া টাকার জন্য যেকোনো সময় অপ্রীতিকর ঘটনার আশঙ্কা করছেন স্থানীয়রা।

অভিযোগ সূত্রে জানা গেছে, প্রধান শিক্ষক নুরুদ্দিন মো. তানভীর শিক্ষার্থীদের উপবৃত্তি দেওয়ার নামে অসংখ্য অভিভাবক থেকে টাকা নিয়েছেন, বিদ্যালয়ে বার্ষিক বরাদ্দের নামমাত্র কাজ দেখিয়ে সব টাকা আত্মসাৎ করেন, শিক্ষার্থীদেরকে হাতুড়ি দিয়ে পেটান, নারী শিক্ষকদের সঙ্গে অসৌজন্যমূলক আচরণ করেন এবং উৎকোচ ছাড়া শিক্ষারদের ছুটি ও বার্ষিক কর্মমূল্যায়নে সই করেন না। এছাড়া ক্লাস না নিয়ে শ্রেণিকক্ষে ঘুমান প্রধান শিক্ষক।

শিক্ষকদের এসিআর দিতে টাকা নিচ্ছেন প্রধান শিক্ষক।

এ সব বিষয়ে গত সেপ্টেম্বর মাসের শেষ সপ্তাহে চট্টগ্রাম বিভাগীয় উপ-পরিচালক, জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা ও উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তার কাছে লিখিত অভিযোগ দিয়েও কোন প্রতিকার হয়নি বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।

বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটির (এসএমসি) সভাপতি মো. মনির উদ্দিন বলেন, প্রধান শিক্ষক নুরুদ্দিন তানভীরের অত্যাচারের কারণে দিন দিন শিক্ষার্থীর সংখ্যা কমে যাচ্ছে। দীর্ঘদিন থেকে তার বিরুদ্ধে লিখিত অভিযোগ দিলেও অদৃশ্য কারণে তাকে প্রত্যাহার কিংবা শাস্তিমূলক কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে না।

এদিকে প্রধান শিক্ষককের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে তার অনিয়মের বর্ণনা দিয়ে ওই বিদ্যালয়ের অন্য সকল শিক্ষক উর্ধতন কর্তৃপক্ষের কাছে একযোগে দরখাস্ত দিয়েছেন। এতে সই করেন সহকারি শিক্ষক মামুন অর রশিদ, মহিমা বেগম, শাহেনা বেগম, খাদিজা খাতুন ও জিন্নাত আরা বেগম।

শিক্ষক জিন্নাত আরা বেগম বলেন, অনিয়ম দুর্নীতি ও অর্থ আত্মসাতের পাশাপাশি প্রধান শিক্ষক নারী শিক্ষকদের সঙ্গে খারাপ ইঙ্গিতে কথা বলেন। একজন পাুরুষ কোন ভাষায় নারীদের কাছে কি চায় এটা সবাই বুঝে। বিষয়গুলোর সঠিক তদন্ত করে বিহিত ব্যবস্থার দাবি জানাই।

শ্রেণিকক্ষে ঘুমাচ্ছেন প্রধান শিক্ষক।

স্থানীয় অভিভাবক মো. কামরুজ্জামান বলেন, সুন্দর একটি সরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানকে ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে নিয়ে গেছেন প্রধান শিক্ষক। এনিয়ে প্রতিবাদ করায় শ্রেণিকক্ষে আমাদের কোমলমতি শিশুদের বিনাকারনে হাতুড়ি দিয়ে পেটান। বিদ্যালয়ের শিক্ষার সুষ্ঠু পরিবেশের স্বার্থে প্রধান শিক্ষক নুরুদ্দিন তানভীরের প্রত্যাহার চাই।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক অভিভাবক জানান, হাতিয়া গরীব এলাকা। এখানে এমনিতে শিক্ষার প্রতি অনাগ্রহ আছে। তার উপর এমন প্রধান শিক্ষক থাকলে শিক্ষার বারটা বাজবে। সরকার তাকে প্রত্যাহার না করলে বিদ্যালয় খোলার পর ঘেরাও করে তার থেকে হাতিয়ে নপওয়া টাকা আদায়সহ অনিয়মের জবাব নেব।

অভিযুক্ত প্রধান শিক্ষক নুরুদ্দিন তানভীর তার বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগ অস্বীকার করেন। তিনি দাবি করেন, শিক্ষক, অভিভাবক ও ম্যানেজিং কমিটি সদস্যরা আমার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রে লিপ্ত হয়েছেন। ঘুস গ্রহণ, টাকা আত্মসাৎ শিক্ষার্থী নির্যাতনের বিষয়টি সঠিক নয়।

উপজেলা ভারপ্রাপ্ত শিক্ষা কর্মকর্তা এবিএম নুরুজ্জামান বলেন, অভিযোগের তদন্ত করে উর্ধতন কর্তৃপক্ষের কাছে প্রতিবেদন পাঠানো হয়েছে। এতে বিধি মোতাবেক ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য অনুরোধ জানানো হয়েছে।

জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মনসুর আলী চৌধুরী বলেন, আমি নতুন এসেছি, অভিযোগের বিষয়টি শুনেছি। তদন্ত প্রতিবেদন হাতে পেলে তা যাচাই করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

চট্টগ্রাম বিভাগীয় উপ-পরিচালক (ডিডি) মো. শফিকুর রহমান বলেন, প্রধান শিক্ষক নুরুদ্দিন তানভীরের বিরুদ্ধে শিক্ষক, অভিভাবক ও ম্যানেজিং কমিটির অভিযোগের কপি পেয়েছি। এ বিষয়ে ব্যবস্থা নিতে জেলা শিক্ষা কর্মকর্তাকে বলা হয়েছে।

নিউজটি শেয়ার করুন

প্রত্যাহারের দাবি

হাতিয়ায় প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে অনিয়ম-দুর্নীতির অভিযোগ

আপডেট সময় ০১:০৩:৪৮ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২৬ অক্টোবর ২০২৩

নোয়াখালীর দ্বীপ উপজেলা হাতিয়ায় ম্যাকপার্শ্বান সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক নুরুদ্দিন মো. তানভীরের বিরুদ্ধে অর্থ আত্মসাত, ঘুস বাণিজ্য, শিক্ষার্থীদের হাতুড়িপেটা ও নারী শিক্ষাকদের সঙ্গে অসৌজন্যমূলক আচরণের অভিযোগ উঠেছে।

এদিকে সুনির্দিষ্ট প্রমাণসহ উর্ধতন কর্মকর্তাদের কাছে অভিযোগ করার একমাস পরও অভিযুক্ত প্রধান শিক্ষক বহাল তবিয়তে থাকায় ফুঁসে উঠেছে এলাকাবাসী ও অভিভাবকরা। হাতিয়ে নেওয়া টাকার জন্য যেকোনো সময় অপ্রীতিকর ঘটনার আশঙ্কা করছেন স্থানীয়রা।

অভিযোগ সূত্রে জানা গেছে, প্রধান শিক্ষক নুরুদ্দিন মো. তানভীর শিক্ষার্থীদের উপবৃত্তি দেওয়ার নামে অসংখ্য অভিভাবক থেকে টাকা নিয়েছেন, বিদ্যালয়ে বার্ষিক বরাদ্দের নামমাত্র কাজ দেখিয়ে সব টাকা আত্মসাৎ করেন, শিক্ষার্থীদেরকে হাতুড়ি দিয়ে পেটান, নারী শিক্ষকদের সঙ্গে অসৌজন্যমূলক আচরণ করেন এবং উৎকোচ ছাড়া শিক্ষারদের ছুটি ও বার্ষিক কর্মমূল্যায়নে সই করেন না। এছাড়া ক্লাস না নিয়ে শ্রেণিকক্ষে ঘুমান প্রধান শিক্ষক।

শিক্ষকদের এসিআর দিতে টাকা নিচ্ছেন প্রধান শিক্ষক।

এ সব বিষয়ে গত সেপ্টেম্বর মাসের শেষ সপ্তাহে চট্টগ্রাম বিভাগীয় উপ-পরিচালক, জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা ও উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তার কাছে লিখিত অভিযোগ দিয়েও কোন প্রতিকার হয়নি বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।

বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটির (এসএমসি) সভাপতি মো. মনির উদ্দিন বলেন, প্রধান শিক্ষক নুরুদ্দিন তানভীরের অত্যাচারের কারণে দিন দিন শিক্ষার্থীর সংখ্যা কমে যাচ্ছে। দীর্ঘদিন থেকে তার বিরুদ্ধে লিখিত অভিযোগ দিলেও অদৃশ্য কারণে তাকে প্রত্যাহার কিংবা শাস্তিমূলক কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে না।

এদিকে প্রধান শিক্ষককের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে তার অনিয়মের বর্ণনা দিয়ে ওই বিদ্যালয়ের অন্য সকল শিক্ষক উর্ধতন কর্তৃপক্ষের কাছে একযোগে দরখাস্ত দিয়েছেন। এতে সই করেন সহকারি শিক্ষক মামুন অর রশিদ, মহিমা বেগম, শাহেনা বেগম, খাদিজা খাতুন ও জিন্নাত আরা বেগম।

শিক্ষক জিন্নাত আরা বেগম বলেন, অনিয়ম দুর্নীতি ও অর্থ আত্মসাতের পাশাপাশি প্রধান শিক্ষক নারী শিক্ষকদের সঙ্গে খারাপ ইঙ্গিতে কথা বলেন। একজন পাুরুষ কোন ভাষায় নারীদের কাছে কি চায় এটা সবাই বুঝে। বিষয়গুলোর সঠিক তদন্ত করে বিহিত ব্যবস্থার দাবি জানাই।

শ্রেণিকক্ষে ঘুমাচ্ছেন প্রধান শিক্ষক।

স্থানীয় অভিভাবক মো. কামরুজ্জামান বলেন, সুন্দর একটি সরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানকে ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে নিয়ে গেছেন প্রধান শিক্ষক। এনিয়ে প্রতিবাদ করায় শ্রেণিকক্ষে আমাদের কোমলমতি শিশুদের বিনাকারনে হাতুড়ি দিয়ে পেটান। বিদ্যালয়ের শিক্ষার সুষ্ঠু পরিবেশের স্বার্থে প্রধান শিক্ষক নুরুদ্দিন তানভীরের প্রত্যাহার চাই।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক অভিভাবক জানান, হাতিয়া গরীব এলাকা। এখানে এমনিতে শিক্ষার প্রতি অনাগ্রহ আছে। তার উপর এমন প্রধান শিক্ষক থাকলে শিক্ষার বারটা বাজবে। সরকার তাকে প্রত্যাহার না করলে বিদ্যালয় খোলার পর ঘেরাও করে তার থেকে হাতিয়ে নপওয়া টাকা আদায়সহ অনিয়মের জবাব নেব।

অভিযুক্ত প্রধান শিক্ষক নুরুদ্দিন তানভীর তার বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগ অস্বীকার করেন। তিনি দাবি করেন, শিক্ষক, অভিভাবক ও ম্যানেজিং কমিটি সদস্যরা আমার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রে লিপ্ত হয়েছেন। ঘুস গ্রহণ, টাকা আত্মসাৎ শিক্ষার্থী নির্যাতনের বিষয়টি সঠিক নয়।

উপজেলা ভারপ্রাপ্ত শিক্ষা কর্মকর্তা এবিএম নুরুজ্জামান বলেন, অভিযোগের তদন্ত করে উর্ধতন কর্তৃপক্ষের কাছে প্রতিবেদন পাঠানো হয়েছে। এতে বিধি মোতাবেক ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য অনুরোধ জানানো হয়েছে।

জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মনসুর আলী চৌধুরী বলেন, আমি নতুন এসেছি, অভিযোগের বিষয়টি শুনেছি। তদন্ত প্রতিবেদন হাতে পেলে তা যাচাই করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

চট্টগ্রাম বিভাগীয় উপ-পরিচালক (ডিডি) মো. শফিকুর রহমান বলেন, প্রধান শিক্ষক নুরুদ্দিন তানভীরের বিরুদ্ধে শিক্ষক, অভিভাবক ও ম্যানেজিং কমিটির অভিযোগের কপি পেয়েছি। এ বিষয়ে ব্যবস্থা নিতে জেলা শিক্ষা কর্মকর্তাকে বলা হয়েছে।