নোয়াখালী ০৩:৫৩ অপরাহ্ন, শনিবার, ০১ নভেম্বর ২০২৫, ১৭ কার্তিক ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

মাইজদীতে অনুমোদনহীন বাণিজ্যমেলায় ব্যবসায়ীরা ক্ষুব্ধ

নিজস্ব প্রতিবেদক
  • আপডেট সময় ০২:২৫:০৩ অপরাহ্ন, শনিবার, ১ নভেম্বর ২০২৫
  • / ১২৫৩ বার পড়া হয়েছে

নোয়াখালীতে জেলা প্রশাসনের অনুমতি না নিয়ে ‘দ্য নোয়াখালী চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি’ নাম দিয়ে হাসপাতালসংলগ্ন আবাসিক এলাকায় মাসব্যাপী শিল্প ও বাণিজ্যমেলার আয়োজন করেছে স্থানীয় বিএনপি নেতারা। এতে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন শহরের প্রতিষ্ঠিত ব্যবসায়ী ও বাসিন্দারা।

জানা গেছে, নোয়াখালীর ২৫০ শয্যার জেনারেল হাসপাতালসহ শতাধিক বেসরকারি হাসপাতালসংলগ্ন মাইজদীর হাউজিং এস্টেটের বালুর মাঠে গত ১৬ অক্টোবর থেকে নোয়াখালী চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির সভাপতি ও জেলা বিএনপির আহ্বায়ক কমিটির সদস্য ফিরোজ আলম মতিনের নেতৃত্বে শতাধিক দোকান নির্মাণের মধ্য দিয়ে মাসব্যাপী শিল্প ও বাণিজ্যমেলার কার্যক্রম শুরু করেছেন স্থানীয় বিএনপি নেতারা।

এতে জেলা শহর মাইজদীর প্রতিষ্ঠিত ব্যবসায়ী, স্কুল-কলেজের কোমলমতি শিক্ষার্থীদের অভিভাবক, হাসপাতাল-ক্লিনিকের মালিক, চিকিৎসকসহ হাউজিং এলাকায় বসবাসকারী বাসিন্দারা ব্যাপক ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। তারা এ মেলার অনুমতি না দিয়ে কার্যক্রম বন্ধ রাখতে প্রশাসনের প্রতি অনুরোধ জানিয়েছেন।

‘জান্নাতুল ফেরদাউস’ নামে হাউজিং এলাকার এক বাসিন্দা বলেন, ‘কিছুদিন পরপর এমন মেলা এই এলাকাকে বসবাসের অযোগ্য করে তুলেছে। এমনিতেই এ এলাকা সন্ত্রাসকবলিত। তার ওপর এ ধরনের মেলা ঘিরে এখানে কিশোর গ্যাংয়ের উৎপাত বেড়ে যায়। নারী ও শিশুরা ঘর থেকে বের হতে পারে না। রাস্তায় হাঁটা-চলাও দায় হয়ে যায়। আমরা এমন মেলা বন্ধের দাবি জানাই।’

নাম প্রকাশের অনিচ্ছুক এক হাসপাতালের মালিক বলেন, ‘আগে আওয়ামী লীগও জনগণের সুবিধার কথা চিন্তা না করে এমন মেলা করত। এখন বিএনপির লোকজনও নিজেদের টাকা আয়ের স্বার্থে জনগণের কথা চিন্তা না করে এসব মেলার আয়োজন করছে। হাসপাতাল এলাকায় একটিমাত্র সড়ক, তাও সব সময় ব্যস্ত থাকে। এমন সড়কে এত বিশাল মেলার আয়োজন খুবই দুর্ভাগ্যজনক।’

আবুল কালাম আজাদ নামে শহরের এক ব্যবসায়ী বলেন, ‘এক গলির শহর নোয়াখালী। এখানে সারা বছর জলাবদ্ধতায় শহরে লোকজন উঠতে পারে না। এখন শুকনো মৌসুম। সামনে ঈদ আসছে, ব্যবসায়ীরা ক্ষতি পোষাতে এখন পুরোদমে ব্যবসা করার আশা নিয়ে দোকান সাজিয়েছে। এ মুহূর্তে প্রভাবশালীরা নিজেদের স্বার্থে মেলার আয়োজন করে বাইরের ব্যবসায়ীদের লাভবান করছে। আমরা এ মেলা বন্ধের দাবি জানাচ্ছি।’

নোয়াখালী সুপার মার্কেট পরিচালনা কমিটির সভাপতি একরামুল হক ডিপটি বলেন, ‘আমি ব্যবসায়ীদের সঙ্গে একমত। কারণ তারা সারা বছর লোকসান দিয়ে এখন ব্যবসার জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছে। এমন অবস্থায় মাসব্যাপী অস্থায়ী মেলা স্থানীয় ব্যবসায়ীদের ক্ষতিগ্রস্ত করবে।’

মেলার আয়োজক নোয়াখালী চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির সভাপতি ও জেলা বিএনপির আহ্বায়ক কমিটির অন্যতম সদস্য ফিরোজ আলম মতিন বলেন, ‘এখানে বাসিন্দাদের মনোরঞ্জনের জন্য স্থানীয় বিএনপি, স্বেচ্ছাসেবক দল, যুবদল ও ছাত্রদলের নেতাদের সমন্বয়ে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় ও হাউজিং সোসাইটির অনুমোদন নিয়ে এ মেলার আয়োজন করা হয়েছে। জেলা প্রশাসনের অনুমতির আগে প্যান্ডেল তৈরির কাজ চলছে। জেলা প্রশাসন থেকে তা বন্ধ রাখতে বলা হয়েছে। তবে বন্ধ না করাটা আমাদের অন্যায় হয়েছে। প্রশাসন অনুমতি না দিলে এ মেলা বন্ধ করে দেওয়া হবে।’

নোয়াখালী জেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের সভাপতি মো. সাবের আহমেদ, জেলা যুবদলের সাধারণ সম্পাদক নুরুল আমিন খান ও জেলা ছাত্রদলের সাবেক সাধারণ সম্পাদক আবু হাসান মোহাম্মদ নোমান বলেন, ‘গতবার মেলার আয়োজন করে আমাদের বদনাম হয়েছে। তাই এবার মেলার সঙ্গে আমরা ওতপ্রোতভাবে জড়িত নই। তবে যেহেতু আমরা চেম্বারের সদস্য, তাই হয়তো আমাদের কথা বলা হচ্ছে।’

জেলা প্রশাসক খন্দকার ইসতিয়াক আহমেদ বলেন, ‘নোয়াখালীতে এখনো এ ধরনের কোনো মেলার অনুমোদন দেওয়া হয়নি। শুনেছি তার পরও মেলার আয়োজন করা হচ্ছে। এটি বন্ধ রাখতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। অন্যথায় খোঁজ নিয়ে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

নিউজটি শেয়ার করুন

মাইজদীতে অনুমোদনহীন বাণিজ্যমেলায় ব্যবসায়ীরা ক্ষুব্ধ

আপডেট সময় ০২:২৫:০৩ অপরাহ্ন, শনিবার, ১ নভেম্বর ২০২৫

নোয়াখালীতে জেলা প্রশাসনের অনুমতি না নিয়ে ‘দ্য নোয়াখালী চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি’ নাম দিয়ে হাসপাতালসংলগ্ন আবাসিক এলাকায় মাসব্যাপী শিল্প ও বাণিজ্যমেলার আয়োজন করেছে স্থানীয় বিএনপি নেতারা। এতে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন শহরের প্রতিষ্ঠিত ব্যবসায়ী ও বাসিন্দারা।

জানা গেছে, নোয়াখালীর ২৫০ শয্যার জেনারেল হাসপাতালসহ শতাধিক বেসরকারি হাসপাতালসংলগ্ন মাইজদীর হাউজিং এস্টেটের বালুর মাঠে গত ১৬ অক্টোবর থেকে নোয়াখালী চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির সভাপতি ও জেলা বিএনপির আহ্বায়ক কমিটির সদস্য ফিরোজ আলম মতিনের নেতৃত্বে শতাধিক দোকান নির্মাণের মধ্য দিয়ে মাসব্যাপী শিল্প ও বাণিজ্যমেলার কার্যক্রম শুরু করেছেন স্থানীয় বিএনপি নেতারা।

এতে জেলা শহর মাইজদীর প্রতিষ্ঠিত ব্যবসায়ী, স্কুল-কলেজের কোমলমতি শিক্ষার্থীদের অভিভাবক, হাসপাতাল-ক্লিনিকের মালিক, চিকিৎসকসহ হাউজিং এলাকায় বসবাসকারী বাসিন্দারা ব্যাপক ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। তারা এ মেলার অনুমতি না দিয়ে কার্যক্রম বন্ধ রাখতে প্রশাসনের প্রতি অনুরোধ জানিয়েছেন।

‘জান্নাতুল ফেরদাউস’ নামে হাউজিং এলাকার এক বাসিন্দা বলেন, ‘কিছুদিন পরপর এমন মেলা এই এলাকাকে বসবাসের অযোগ্য করে তুলেছে। এমনিতেই এ এলাকা সন্ত্রাসকবলিত। তার ওপর এ ধরনের মেলা ঘিরে এখানে কিশোর গ্যাংয়ের উৎপাত বেড়ে যায়। নারী ও শিশুরা ঘর থেকে বের হতে পারে না। রাস্তায় হাঁটা-চলাও দায় হয়ে যায়। আমরা এমন মেলা বন্ধের দাবি জানাই।’

নাম প্রকাশের অনিচ্ছুক এক হাসপাতালের মালিক বলেন, ‘আগে আওয়ামী লীগও জনগণের সুবিধার কথা চিন্তা না করে এমন মেলা করত। এখন বিএনপির লোকজনও নিজেদের টাকা আয়ের স্বার্থে জনগণের কথা চিন্তা না করে এসব মেলার আয়োজন করছে। হাসপাতাল এলাকায় একটিমাত্র সড়ক, তাও সব সময় ব্যস্ত থাকে। এমন সড়কে এত বিশাল মেলার আয়োজন খুবই দুর্ভাগ্যজনক।’

আবুল কালাম আজাদ নামে শহরের এক ব্যবসায়ী বলেন, ‘এক গলির শহর নোয়াখালী। এখানে সারা বছর জলাবদ্ধতায় শহরে লোকজন উঠতে পারে না। এখন শুকনো মৌসুম। সামনে ঈদ আসছে, ব্যবসায়ীরা ক্ষতি পোষাতে এখন পুরোদমে ব্যবসা করার আশা নিয়ে দোকান সাজিয়েছে। এ মুহূর্তে প্রভাবশালীরা নিজেদের স্বার্থে মেলার আয়োজন করে বাইরের ব্যবসায়ীদের লাভবান করছে। আমরা এ মেলা বন্ধের দাবি জানাচ্ছি।’

নোয়াখালী সুপার মার্কেট পরিচালনা কমিটির সভাপতি একরামুল হক ডিপটি বলেন, ‘আমি ব্যবসায়ীদের সঙ্গে একমত। কারণ তারা সারা বছর লোকসান দিয়ে এখন ব্যবসার জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছে। এমন অবস্থায় মাসব্যাপী অস্থায়ী মেলা স্থানীয় ব্যবসায়ীদের ক্ষতিগ্রস্ত করবে।’

মেলার আয়োজক নোয়াখালী চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির সভাপতি ও জেলা বিএনপির আহ্বায়ক কমিটির অন্যতম সদস্য ফিরোজ আলম মতিন বলেন, ‘এখানে বাসিন্দাদের মনোরঞ্জনের জন্য স্থানীয় বিএনপি, স্বেচ্ছাসেবক দল, যুবদল ও ছাত্রদলের নেতাদের সমন্বয়ে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় ও হাউজিং সোসাইটির অনুমোদন নিয়ে এ মেলার আয়োজন করা হয়েছে। জেলা প্রশাসনের অনুমতির আগে প্যান্ডেল তৈরির কাজ চলছে। জেলা প্রশাসন থেকে তা বন্ধ রাখতে বলা হয়েছে। তবে বন্ধ না করাটা আমাদের অন্যায় হয়েছে। প্রশাসন অনুমতি না দিলে এ মেলা বন্ধ করে দেওয়া হবে।’

নোয়াখালী জেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের সভাপতি মো. সাবের আহমেদ, জেলা যুবদলের সাধারণ সম্পাদক নুরুল আমিন খান ও জেলা ছাত্রদলের সাবেক সাধারণ সম্পাদক আবু হাসান মোহাম্মদ নোমান বলেন, ‘গতবার মেলার আয়োজন করে আমাদের বদনাম হয়েছে। তাই এবার মেলার সঙ্গে আমরা ওতপ্রোতভাবে জড়িত নই। তবে যেহেতু আমরা চেম্বারের সদস্য, তাই হয়তো আমাদের কথা বলা হচ্ছে।’

জেলা প্রশাসক খন্দকার ইসতিয়াক আহমেদ বলেন, ‘নোয়াখালীতে এখনো এ ধরনের কোনো মেলার অনুমোদন দেওয়া হয়নি। শুনেছি তার পরও মেলার আয়োজন করা হচ্ছে। এটি বন্ধ রাখতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। অন্যথায় খোঁজ নিয়ে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’