হত্যায় অভিযুক্ত দুইভাই, পরিবারের দাবি ষড়যন্ত্র
- আপডেট সময় ০৫:২৬:২৭ অপরাহ্ন, রবিবার, ১৬ জুলাই ২০২৩
- / ১৩৮১ বার পড়া হয়েছে
নোয়াখালীর কবিরহাটে ব্যাটারীচালিত অটোরিকশা চালক মেজবাহ উদ্দিন রাব্বি (২৮) হত্যা মামলায় মো. রাসেল ও রুমেজ নামে দুই ভাইসহ তিনজনকে অভিযুক্ত করে চার্জশিট দিয়েছে পুলিশ। তবে অভিযুক্তদের পরিবারের দাবি, আসামি দুইভাই নির্দোষ। তারা যড়যন্ত্রের শিকার।
রোববার (১৬ জুলাই) দুপুরে কবিরহাট পৌরসভার জিরো পয়েন্টে পরিবারের সদস্য ও এলাকাবাসীদের উদ্যোগে মানববন্ধনের আয়োজন করে এ দাবি করা হয়।
মানববন্ধনে আসামি মো. রাসেলের মা বিবি ফাতেমা বলেন, আমার ছেলে অসুস্থ। তাকে ষড়যন্ত্র করে হত্যা মামলায় ফাঁসিয়ে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এখন আমার পরিবারের উপার্জন করা মেঝছেলে মো. রুমেজকেও চার্জশিটে আসামি করে পুলিশ খুঁজছে। সে কোথায় আছে তা আমরা জানি না। দুই ছেলের এমন বিপদে আমরা খেয়ে-না খেয়ে অনাহারে দিন কাটাচ্ছি।
এসময় রাসেলের ছোটভাই মো. বাবু দাবি করেন, ‘হত্যার ঘটনায় প্রথমে পুলিশ মাইন উদ্দিন ও সোহেল নামে দুইজনকে আটক করে। পরে সোহেলের পরিবার থেকে অনৈতিক সুবিধা নিয়ে আমার দুইভাইকে ফাঁসিয়ে দিয়েছে পুলিশ। আমরা মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে এর বিচার চাই।’
আসামি মো. রাসেল ও রুমেজ কবিরহাট পৌরসভা ১ নম্বর ওয়ার্ডের এনায়েত নগর গ্রামের মৃত সফিউল্যাহর ছেলে এবং অপর আসামি মাইন উদ্দিন কবিরহাট পৌরসভার ৯ নম্বর ওয়ার্ডের ঘোষবাগ গ্রামের মো. আবদুল হকের ছেলে। এরমধ্যে মো. রাসেল ও মাইন উদ্দিন গ্রেপ্তার হয়ে কারাগারে এবং রুমেজ পলাতক রয়েছেন।
কবিরহাট থানা সূত্রে জানা গেছে, গত ২৫ ডিসেম্বর রাত সোয়া ৮টার দিকে কবিরহাট পৌরসভার ১ নম্বর ওয়ার্ডের এনায়েত নগর গ্রামে রিকশাচালক মজবাহ উদ্দিন রাব্বিকে গলাকেটে হত্যা করা হয়। এ ঘটনায় পরদিন তার মা তাজনাহার বেগম বিজলী বাদি হয়ে মো. রাসেল, তারভাই রুমেজ ও মাইন উদ্দিন নামে তিনজনকে আসামি করে হত্যা মামলা দায়ের করেন। পুলিশ রাসেল ও মাইন উদ্দিনকে গ্রেপ্তার করে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠায়। অপর আসামি রুমেজ পলাতক রয়েছে। তদন্ত শেষে গত ২৬ জুন তিন আসামির বিরুদ্ধে আদালতে অভিযোগপত্র (নম্বর-৪২) দাখিল করা হয়েছে।
রাসেলের ভগ্নিপতি মো. আবদুর রহিম বলেন, আমাদের ধারনা হত্যার ঘটনাটি দূর্বৃত্তরা অন্যত্র ঘটিয়ে নিরপরাধ ব্যক্তিদের ফাঁসাতে এনায়েত নগরে মরদেহ এনে রেখে গেছেন। কারন একটা মানুষকে গলাকেটে হত্যা করলে রক্ত থাকবে। কিন্তু এলাকার কোথাও রক্তের দাগ পাওয়া যায় নাই।
অভিযুক্ত রাসেলের বোন লাকি আক্তার দাবি করেন, হত্যার ঘটনায় পুলিশকে টাকা না দেওয়ায় তারা বাদিকে প্ররোচনা দিয়ে আমার অসুস্থ ও নিরপরাধ ভাইদেরকে হত্যা মামলায় ফাঁসিয়ে দিয়েছে। কারণ ঘটনার সময় আমার অসুস্থ ভাই রাসেল বাড়িতে এবং রুমেজ বিজয় মেলায় দোকান করছিল। আশপাশের সিসিটিভি ফুটেজ নিলে সব পরিস্কার হয়ে যাবে। আমরা এ ঘটনার পুনঃতদন্তের দাবি জানাই।
তবে কোনো ধরণের অবৈধ সুবিধার অভিযোগ অস্বীকার করে মামলার তদন্ত কর্মকর্তা কবিরহাট থানার উপপরিদর্শক (এসআই) এসএম মাহবুবুল ইসলাম বলেন, বাদির দায়ের করা অভিযোগে আসামিদের নাম উল্লেখ করা হয়েছে। তদন্ত করে অভিযোগের প্রাথমিক সত্যতা পাওয়ায় ওই তিন আসামির বিরুদ্ধে আদালতে চার্জশিট দাখিল করা হয়েছে। এখানে অন্য কারো জড়িত থাকার প্রমাণ পাওয়া যায়নি।
মামলার রেকর্ডকারী কর্মকর্তা কবিরহাট থানার পরিদর্শক (তদন্ত) মো. হেলাল উদ্দিন বলেন, আমি যোগদানের তিন দিনের মাথায় এ ঘটনাটি ঘটে। আমি তখন কাউকে চিনতামও না। মরদেহ উদ্ধার এবং অটোরিকশা, ছোরা ও রক্তমাখা জামাকাপড় জব্দমূলে মামলা রেকর্ড করা হয়েছে।
কবিরহাট থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. রফিকুল ইসলাম বলেন, ঘটনার সময় আমি ছুটিতে ছিলাম। মামলার পর পুলিশ তদন্ত করে আদালতে প্রতিবেদন দিয়েছে। এখন আদালতের বিচারক মামলার পরবর্তী কার্যক্রম পরিচালনা করবেন।
মানববন্ধনে আসামি রাসেল ও রুমেজের মা বিবি ফাতেমা, বোন শিরিন আক্তার, লাকি আক্তার, কাকলী আক্তার, চাঁদনী আক্তার, বোন শিরিনের স্বামী আবদুর রহিম, ছোটভাই বাবুসহ এলাকার লোকজন উপস্থিত ছিলেন।