চরজব্বরে রাসেদ বাহিনীর অত্যাচারে দুই গ্রামের মানুষ অতিষ্ঠ
- আপডেট সময় ১১:১৮:৪৪ অপরাহ্ন, শনিবার, ৪ জুন ২০২২
- / ১৫৬৬ বার পড়া হয়েছে
নোয়াখালীর সূবর্ণচরের চরজব্বর ইউনিয়নে রাসেদ বাহিনীর অত্যাচারে জাহাজমারা ও চরহাসান গ্রামের বাসিন্দারা অতিষ্ঠ। নির্বাচনে পরাজয়ের পর নৌকার লোকজনকে ধরে ধরে প্রতিনিয়ত মারছেনএ বাহিনীর সদস্যরা।
শনিবার (৪ জুন) দুপুরে জাহাজমারা আওয়ামী লীগ কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলন করে এমন দাবি করেন চেউয়াখালী বাজারের ব্যবসায়ীরা।
ব্যবসায়ী হাজী মো. জাকের হোসেন (৬০) অভিযোগ করে বলেন, তিনি চেউয়াখালী বাজারের ব্যবসায়ী ও জাহাজমারা রেডক্রিসেন্ট উচ্চ বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির সভাপতি। বিগত ১০ ফেব্রুয়ারী স্থানীয় ইউপি নির্বাচনে নৌকার পরাজয়ের পর স্বতন্ত্র প্রার্থীর কর্মী কিশোর গ্যাং লিডার মো. রাসেদ এলাকায় ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করেছেন।
তিনি আরও বলেন, স্কুল কমিটির নিয়ন্ত্রণ নিতে রাসেদ গত ২৮ মে রাতে আমাকে প্রকাশ্য বাজারে পিটিয়ে জখম করে। এ সংক্রান্ত একটি অডিও ভাইরাল হয়। তবুও স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান ওমর ফারুক ও চরজব্বর থানায় অভিযোগ দিয়েও কোন প্রতিকার পাইনি। বরং অভিযোগ দেওয়ায় আমি এখন নিরাপত্তাহীনতায় আছি।
জাহাজমারা গ্রামের সাবেক ইউপি সদস্য মো. সিরাজ উদ্দিন বলেন, আমরা নৌকার পক্ষে থাকাই কাল হয়েছে। নির্বাচনে নৌকা হেরে যাওয়ায় পর থেকে গত চারমাসে রাসেদ বাহিনী কমপক্ষে ১৫ জনের উপর আক্রমণ করেছে। আমরা এর প্রতিকার চাই।
চরহাসান গ্রামের মো. মিজান মাঝি জানান, আমরা ১০ ভাই আওয়ামী লীগের রাজনীতি করি। নির্বাচনের পর রাসেদ বাহিনীকে চাঁদা না দেওয়ায় ইমান আলী বাজারের পাশে নৌকা থেকে আমাদের জালসহ অন্তত ৫ লাখ টাকার মালামাল লুট করে নিয়ে গেছে। এখন আমাদের বাড়িতে থাকাও দায় হয়ে পড়েছে।
স্থানীয় যুবলীগ নেতা বাহার উদ্দিন বলেন, শেখ হাসিনার দেওয়া নৌকার প্রার্থীর পক্ষে কাজ করাই আমাদের জন্য কাল হয়েছে। বিদ্রোহী প্রার্থী ফারুক জিতেই তার নির্দেশে রাসেদ ও তার মামা আবদুল হাইয়ের নেতৃত্বে তাদের সন্ত্রাসী বাহিনী সমগ্র এলাকায় অস্থিতিশীল পরিস্থিতির সৃষ্টি করেছে।
মো. সোহেল রানা নামের এক যুবলীগ কর্মী জানান, এসব বিষয়ে বিচার করার কেউ নাই। প্রধানমন্ত্রীর দেওয়া নৌকার পক্ষে থাকায় আমরা আজ নিপীড়নের শিকার হচ্ছি। চেয়ারম্যান ও স্থানীয় প্রশাসন কোন প্রতিকার নিচ্ছে না। আমরা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আশু হস্তক্ষেপ কামনা করছি।
পরে ভুক্তভোগীরা চেউয়াখালী বাজারে কিশোর গ্যাং সন্ত্রাসী রাসেদের গ্রেফতার দাবিতে মানববন্ধন ও বিক্ষোভ মিছিল করেছে। মো. রাসেদ জাহাজমারা গ্রামের কাঞ্চন মাঝির পুরাতন বাড়ির মো. মফিজুল হকের ছেলে।
চরজব্বরের পরাজিত নৌকার প্রার্থী আওয়ামী লীগ নেতা তরিকুল ইসলাম ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে প্রশাসনকে তড়িৎ ব্যবস্থা গ্রহনের দাবি জানিয়েছেন।
এসব বিষয়ে জানতে মো. রাসেদের মোবাইলে বার বার ফোন করা হলে তিনি রিসিভ করেও কথা বলেননি। পরে খুদেবার্তা পাঠালে তিনি মোবাইল ফোন বন্ধ করে দেন।
চরজব্বর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান (আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী) অ্যাডভোকেট ওমর ফারুক বলেন, নির্বাচনে রাসেদ আমার কর্মী ছিল। তার বিরুদ্ধে কেউ আমাকে কোনো অভিযোগ করেনি। রাসেদের টেলিফোনে হুমকি ও মারধরের ভাইরাল অডিও সম্পর্কে জানতে চাইলে চেয়ারম্যান বলেন, এ ব্যাপারে আমি কিছুই জানি না।
চরজব্বর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. জিয়াউল হক তরিক খন্দকার বলেন, কিশোর গ্যাং সম্পর্কে কোউ অভিযোগ করেনি। অভিযোগ পেলে বিষয়টি খতিয়ে দেখে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
গত ১০ ফেব্রুয়ারি সূবর্ণচরের চরজব্বর ইউনিয়নে নৌকার প্রার্থী ছিলেন আওয়ামী লীগ নেতা তরিকুল ইসলাম। তার প্রতিদ্বন্দ্বী আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী ছিলেন অ্যাডভোকেট ওমর ফারক। স্থানীয় নোয়াখালী-৪ আসনের সংসদ সদস্য একরামুল করিম চৌধুরী নৌকার বিরোধীতা করে বিদ্রোহী প্রার্থীর পক্ষে অবস্থান নেওয়ার অভিযোগ উঠে। পরে নির্বাচনে নৌকাকে হারিয়ে আনারস প্রতীকের বিদ্রোহী ওমর ফারুক জয়লাভ করেন।