নোয়াখালী ০৪:৫১ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ১৮ ডিসেম্বর ২০২৪, ৩ পৌষ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

সূবর্ণচরের চরজব্বর ইউনিয়ন

নৌকার সমর্থকদের ধরে ধরে মারছেন বিদ্রোহীরা

নিজস্ব প্রতিবেদক
  • আপডেট সময় ০৬:১৬:১৩ অপরাহ্ন, শনিবার, ১২ ফেব্রুয়ারী ২০২২
  • / ১৫৩০ বার পড়া হয়েছে

নোয়াখালীর সুবর্ণচরের চরজব্বর ইউনিয়নে নির্বাচন পরবর্তী সহিংসতা ছড়িয়ে পড়েছে। সেখানে নৌকার সমর্থকদের বাড়িতে কিংবা রাস্তায় যেখানেই পাচ্ছে মারধর করছে জয়ী বিদ্রোহী প্রার্থীর লোকজন।

বৃহস্পতিবার (১০ ফেব্রুয়ারি) রাতে নির্বাচনের ফলাফল ঘোষণার পর থেকে শুক্রবার (১১ ফেব্রুয়ারি) রাত পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টায় অর্ধশতাধিক বাড়িঘরে হামলা ভাঙচুরের ঘটনা ঘটেছে। এতে নারী-পুরুষসহ অন্তত ১০ জন আহত হয়েছে। তাদেরকে হাসপাতালে চিকিৎসা দেওয়া হয়েছে।

উপজেলা আওয়ামী লীগের অব্যাহতিপ্রাপ্ত সভাপতি ও চরজব্বর ইউনিয়নের বিজয়ী স্বতন্ত্র প্রার্থীর সমর্থকরা এ হামলা চালাচ্ছেন বলে অভিযোগ উঠেছে।

বৃহস্পতিবার অনুষ্ঠিত নির্বাচনে এ ইউনিয়নে নৌকার প্রার্থী তরিকুল ইসলামকে হারিয়ে বিজয়ী হয়েছেন আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী স্বতন্ত্র প্রার্থী অ্যাডভোকেট মো. ওমর ফারুক (আনারস)।

ক্ষতিগ্রস্তদের দাবি, নৌকা পক্ষে প্রকাশ্যে ভোট করায় এখন ঘোষণা দিয়ে তাদের ওপর অতর্কিত এ হামলা চালাচ্ছে অ্যাডভোকেট মো. ওমর ফারুকের কর্মী-সমর্থকরা।


স্থানীয়রা জানান, ফলাফল ঘোষণার পর থেকে আনারস প্রতীকের চেয়ারম্যান প্রার্থী মোহাম্মদ ওমর ফারুকের সমর্থকরা যেখানেই নৌকার সমর্থক পাচ্ছেন তাদেরকে মারধর করছেন। ভয়ে এখন চরজব্বর ইউনিয়ন পুরুষশূন্য হয়ে পড়েছে। নারী ও শিশুরা আতঙ্কে দিন কাটাচ্ছে।

খবর নিয়ে জানা গেছে, বৃহস্পতিবার রাত ১১টার দিকে ১নং ওয়ার্ডের চেওয়াখালী বাজার এলাকার নৌকার কর্মী নয়নের বাড়িতে হামলা করে সন্ত্রাসীরা। শুক্রবার (১১ ফেব্রুয়ারি) সকালে ৬নং ওয়ার্ডের আবদুল্লা মিয়ার হাট এলাকায় সিএনজিতে থাকা ইউনিয়ন যুবলীগের সদস্য শাহ আলম (৩০) ও হারুন মিস্ত্রির উপর হামলা করে আরেক দল সন্ত্রাসী। এরপর ২নং ওয়ার্ডের শিমুলের চা দোকান, ডা. মনসুরের ওষুধের দোকান ও ইউসুফের মুদি দোকানে হামলা চালানো হয়।

চরজব্বর ইউনিয়নের ১নং ওয়ার্ডের চেওয়াখালী বাজার এলাকার নৌকার কর্মী আহত নয়ন বলেন, নৌকার পক্ষে ভোট করায় বিএনপি জামায়াতের লোকজন নিয়ে আনারস প্রতীকের চেয়ারম্যান প্রার্থীর সমর্থকরা আমার বাড়িতে হামলা করে সব তছনছ করে ফেলেছে। আমি বর্তমানে হত্যার ভয়ে এলাকা ছেড়ে অন্যস্থানে আছি। এখনো আমার বাড়িতে গিয়ে হুমকি দিচ্ছে তারা।

হামলার শিকার ২নং ওয়ার্ডের চা দোকানের মালিক শিমুল বলেন, আমি কেন নৌকার জন্য কাজ করেছি তাই প্রকাশ্যে এসে আমার দোকানে হামলা ও ভাংচুর চালিয়েছে। আমার দোকানের মালামাল ও ক্যাশ ভেঙে নগদ টাকা নিয়ে গেছে। আমরা পরিবার পরিজন নিয়ে নিরাপত্তাহীনতায় আছি।

ইউনিয়ন যুবলীগের সদস্য শাহ আলম বলেন, আমি আমার স্ত্রী সন্তানসহ মাইজদী যাওয়ার পথে আনারসের সমর্থকরা আমাদের ওপর হামলা চালিয়েছে। আমার হাত ভেঙে দিয়েছে। আমি বর্তমানে নোয়াখালী সদর হাসপাতালে ভর্তি রয়েছি।

চরজব্বর ইউনিয়নে পরাজিত নৌকার প্রার্থী তরিকুল ইসলাম অভিযোগ করে বলেন, ফলাফল ঘোষণার পর থেকে আমার কর্মী-সমর্থকদের বাড়ি ঘরে হামলা ভাঙচুর ও তাণ্ডব চালানো হচ্ছে। ভয়ে কর্মী-সমর্থকরা বাড়িতে থাকতে পারছেন না। প্রশাসনও তাদের পক্ষ নিয়েছে। আমি আমার কর্মী সমর্থকদের নিরাপত্তা চাই।

তবে হামলার অভিযোগ অস্বীকার করেছেন বিজয়ী স্বতন্ত্র প্রার্থী অ্যাডভোকেট মোহাম্মদ ওমর ফারুক । তিনি বলেন, প্রত্যেক ওয়ার্ডে ৭-৮ জন করে মেম্বার প্রার্থী ছিলেন। তাদের সমর্থকরাই বিরোধ, সংঘর্ষ ও ভাঙচুরে জড়িয়ে পড়েছে। আমি আমার জায়গা থেকে শান্তির জন্য চেষ্টা করছি। আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি হলে আমি কোনো দায় নেবো না। অপরাধীদের আইনের হাতে সোপর্দ করা হবে।

হামলার বিষয়ে জানতে চরজব্বর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. জিয়াউল হকের মুঠোফোনে কল দিলেও তিনি রিসিভ করেননি।

তবে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (অপরাধ ও প্রশাসন) দীপক জ্যোতি খীসা বলেন, হামলা সংঘর্ষের খবর পেয়ে ওই এলাকায় অতিরিক্ত পুলিশ পাঠানো হয়েছে। আইনশৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণে সর্বোচ্চ চেষ্টা করা হচ্ছে।

নিউজটি শেয়ার করুন

সূবর্ণচরের চরজব্বর ইউনিয়ন

নৌকার সমর্থকদের ধরে ধরে মারছেন বিদ্রোহীরা

আপডেট সময় ০৬:১৬:১৩ অপরাহ্ন, শনিবার, ১২ ফেব্রুয়ারী ২০২২

নোয়াখালীর সুবর্ণচরের চরজব্বর ইউনিয়নে নির্বাচন পরবর্তী সহিংসতা ছড়িয়ে পড়েছে। সেখানে নৌকার সমর্থকদের বাড়িতে কিংবা রাস্তায় যেখানেই পাচ্ছে মারধর করছে জয়ী বিদ্রোহী প্রার্থীর লোকজন।

বৃহস্পতিবার (১০ ফেব্রুয়ারি) রাতে নির্বাচনের ফলাফল ঘোষণার পর থেকে শুক্রবার (১১ ফেব্রুয়ারি) রাত পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টায় অর্ধশতাধিক বাড়িঘরে হামলা ভাঙচুরের ঘটনা ঘটেছে। এতে নারী-পুরুষসহ অন্তত ১০ জন আহত হয়েছে। তাদেরকে হাসপাতালে চিকিৎসা দেওয়া হয়েছে।

উপজেলা আওয়ামী লীগের অব্যাহতিপ্রাপ্ত সভাপতি ও চরজব্বর ইউনিয়নের বিজয়ী স্বতন্ত্র প্রার্থীর সমর্থকরা এ হামলা চালাচ্ছেন বলে অভিযোগ উঠেছে।

বৃহস্পতিবার অনুষ্ঠিত নির্বাচনে এ ইউনিয়নে নৌকার প্রার্থী তরিকুল ইসলামকে হারিয়ে বিজয়ী হয়েছেন আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী স্বতন্ত্র প্রার্থী অ্যাডভোকেট মো. ওমর ফারুক (আনারস)।

ক্ষতিগ্রস্তদের দাবি, নৌকা পক্ষে প্রকাশ্যে ভোট করায় এখন ঘোষণা দিয়ে তাদের ওপর অতর্কিত এ হামলা চালাচ্ছে অ্যাডভোকেট মো. ওমর ফারুকের কর্মী-সমর্থকরা।


স্থানীয়রা জানান, ফলাফল ঘোষণার পর থেকে আনারস প্রতীকের চেয়ারম্যান প্রার্থী মোহাম্মদ ওমর ফারুকের সমর্থকরা যেখানেই নৌকার সমর্থক পাচ্ছেন তাদেরকে মারধর করছেন। ভয়ে এখন চরজব্বর ইউনিয়ন পুরুষশূন্য হয়ে পড়েছে। নারী ও শিশুরা আতঙ্কে দিন কাটাচ্ছে।

খবর নিয়ে জানা গেছে, বৃহস্পতিবার রাত ১১টার দিকে ১নং ওয়ার্ডের চেওয়াখালী বাজার এলাকার নৌকার কর্মী নয়নের বাড়িতে হামলা করে সন্ত্রাসীরা। শুক্রবার (১১ ফেব্রুয়ারি) সকালে ৬নং ওয়ার্ডের আবদুল্লা মিয়ার হাট এলাকায় সিএনজিতে থাকা ইউনিয়ন যুবলীগের সদস্য শাহ আলম (৩০) ও হারুন মিস্ত্রির উপর হামলা করে আরেক দল সন্ত্রাসী। এরপর ২নং ওয়ার্ডের শিমুলের চা দোকান, ডা. মনসুরের ওষুধের দোকান ও ইউসুফের মুদি দোকানে হামলা চালানো হয়।

চরজব্বর ইউনিয়নের ১নং ওয়ার্ডের চেওয়াখালী বাজার এলাকার নৌকার কর্মী আহত নয়ন বলেন, নৌকার পক্ষে ভোট করায় বিএনপি জামায়াতের লোকজন নিয়ে আনারস প্রতীকের চেয়ারম্যান প্রার্থীর সমর্থকরা আমার বাড়িতে হামলা করে সব তছনছ করে ফেলেছে। আমি বর্তমানে হত্যার ভয়ে এলাকা ছেড়ে অন্যস্থানে আছি। এখনো আমার বাড়িতে গিয়ে হুমকি দিচ্ছে তারা।

হামলার শিকার ২নং ওয়ার্ডের চা দোকানের মালিক শিমুল বলেন, আমি কেন নৌকার জন্য কাজ করেছি তাই প্রকাশ্যে এসে আমার দোকানে হামলা ও ভাংচুর চালিয়েছে। আমার দোকানের মালামাল ও ক্যাশ ভেঙে নগদ টাকা নিয়ে গেছে। আমরা পরিবার পরিজন নিয়ে নিরাপত্তাহীনতায় আছি।

ইউনিয়ন যুবলীগের সদস্য শাহ আলম বলেন, আমি আমার স্ত্রী সন্তানসহ মাইজদী যাওয়ার পথে আনারসের সমর্থকরা আমাদের ওপর হামলা চালিয়েছে। আমার হাত ভেঙে দিয়েছে। আমি বর্তমানে নোয়াখালী সদর হাসপাতালে ভর্তি রয়েছি।

চরজব্বর ইউনিয়নে পরাজিত নৌকার প্রার্থী তরিকুল ইসলাম অভিযোগ করে বলেন, ফলাফল ঘোষণার পর থেকে আমার কর্মী-সমর্থকদের বাড়ি ঘরে হামলা ভাঙচুর ও তাণ্ডব চালানো হচ্ছে। ভয়ে কর্মী-সমর্থকরা বাড়িতে থাকতে পারছেন না। প্রশাসনও তাদের পক্ষ নিয়েছে। আমি আমার কর্মী সমর্থকদের নিরাপত্তা চাই।

তবে হামলার অভিযোগ অস্বীকার করেছেন বিজয়ী স্বতন্ত্র প্রার্থী অ্যাডভোকেট মোহাম্মদ ওমর ফারুক । তিনি বলেন, প্রত্যেক ওয়ার্ডে ৭-৮ জন করে মেম্বার প্রার্থী ছিলেন। তাদের সমর্থকরাই বিরোধ, সংঘর্ষ ও ভাঙচুরে জড়িয়ে পড়েছে। আমি আমার জায়গা থেকে শান্তির জন্য চেষ্টা করছি। আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি হলে আমি কোনো দায় নেবো না। অপরাধীদের আইনের হাতে সোপর্দ করা হবে।

হামলার বিষয়ে জানতে চরজব্বর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. জিয়াউল হকের মুঠোফোনে কল দিলেও তিনি রিসিভ করেননি।

তবে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (অপরাধ ও প্রশাসন) দীপক জ্যোতি খীসা বলেন, হামলা সংঘর্ষের খবর পেয়ে ওই এলাকায় অতিরিক্ত পুলিশ পাঠানো হয়েছে। আইনশৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণে সর্বোচ্চ চেষ্টা করা হচ্ছে।