নোয়াখালী ১১:৫৪ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ০৯ মে ২০২৪, ২৬ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

স্ত্রী–সন্তানদের অবহেলায় বৃদ্ধাশ্রমে ঠাঁই হলো রশিদের

ডিজিটাল নোয়াখালী ডেস্ক :
  • আপডেট সময় ১১:৩৮:১৬ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ২৫ মার্চ ২০২২
  • / ৪৮৮ বার পড়া হয়েছে

আবদুর রশিদ।

৮৪ বছর বয়সী আবদুর রশিদের চার ছেলে ও এক মেয়ে। দুই ছেলে সরকারি চাকরি করেন, এক ছেলে ব্যবসায়ী ও অন্যজন শিক্ষার্থী। ছেলেরা অন্যত্র থাকেন এবং তাঁর খোঁজখবর নেন না। স্ত্রী ও মেয়েকে নিয়ে বসবাস করতেন তিনি। পরিবারের সদস্যদের অবহেলা, দুর্ব্যবহার ও সম্পত্তি লিখে দিতে চাপ দেওয়ার কারণে তিনি চাঁপাইনবাবগঞ্জের মহানন্দা প্রবীণ নিবাসে (বৃদ্ধাশ্রম) ঠাঁই নিয়েছেন।

বৃদ্ধাশ্রমে আবদুর রশিদের বিবরণী থেকে এসব তথ্য জানা গেছে। আবদুর রশিদ চাঁপাইনবাবগঞ্জ পৌর এলাকার নামোশংকরবাটী সিদ্দিক বিশ্বাসপাড়ার বাসিন্দা এবং কৃষি বিভাগের অবসরপ্রাপ্ত ব্লক সুপারভাইজার। সোমবার থেকে তিনি মহানন্দা প্রবীণ নিবাসে অবস্থান করছেন। এর মধ্যে স্ত্রী-সন্তানদের কেউ তাঁর খোঁজ নেননি।

বৃদ্ধাশ্রমে রশিদের বিবরণীতে লেখা হয়েছে, সম্প্রতি অবসরভাতার ৩৭ হাজার টাকা ব্যাংক থেকে উত্তোলন করেন আবদুর রশিদ। সেই টাকা স্ত্রী ও মেয়ে মিলে আত্মসাৎ করেন। তাঁর সঙ্গে দুর্ব্যবহারও করেন তাঁরা। এ ছাড়া তাঁর নামে থাকা বাড়ি ও জমি নিজেদের নামে লিখে দিতে চাপ দিচ্ছিলেন স্ত্রী-সন্তানেরা। এ কারণে মনের দুঃখে তিনি বৃদ্ধাশ্রমে আশ্রয় নিয়েছেন।

বৃদ্ধাশ্রমের প্রশাসনিক কর্মকর্তা মো. আলম বলেন, ‘তিনি আমাদের বলেছেন, সন্তানদের কাছে আর যাবেন না। মারা গেলেও যেন তাঁর লাশ সন্তানদের না দেওয়া হয় এবং বৃদ্ধাশ্রম কর্তৃপক্ষই কবর দেওয়ার ব্যবস্থা করে।’

ওই বৃদ্ধাশ্রমে কথা হয়, রশিদের সঙ্গে। এ সময় কান্নাজড়িত কণ্ঠে তিনি বলেন, ‘৬০ বছর ধরে স্ত্রীর সঙ্গে ঘর করছি। সন্তানদের লালন-পালন করলাম। কিন্তু কেউই আমার হইল না। আমি আর তাদের কাছে ফিরে যাব না।’ আবদুর রশিদ বলেন, সিরাজগঞ্জের শাহজাদপুরে তাঁর বাড়ি। চাকরিসূত্রে চাঁপাইনবাবগঞ্জে এসে এখানেই বিয়ে করে থিতু হন। বৃদ্ধাশ্রমের বিবরণীতে তাঁর সম্পর্কে লেখা তথ্য সঠিক বলে জানান তিনি।

এ ব্যাপারে কথা হয় রশিদের মেয়ে ফাতেমা খাতুনের (৩৫) সঙ্গে। এ সময় সব অভিযোগ অস্বীকার করে তিনি বলেন, ‘আমাদের বিরুদ্ধে দুর্ব্যবহার ও জমি লিখিয়ে নেওয়ার জন্য চাপ দেওয়ার যে অভিযোগ করা হচ্ছে, তা সম্পূর্ণ মিথ্যা। অবসরভাতার ৩৭ হাজার টাকার মধ্যে ২০ হাজার টাকা তিনি সঙ্গে নিয়ে গেছেন। ১৭ হাজার টাকা সংসারে খরচ হয়েছে।’ ফাতেমা খাতুন বলেন, ‘বৃদ্ধাশ্রম থেকে এক দিন ফোন দেওয়া হয়েছিল। আমি বলেছি, বাবাকে যেন বাড়িতে পৌঁছে দেওয়া হয়। আমরাই তাঁর দেখভাল করব।’

আবদুর রশিদের বড় ছেলে আবদুর রহমান (৫৫) বলেন, তাঁর বাবার বাড়ি ছেড়ে যাওয়া নতুন কিছু নয়। এর আগেও তিনি বাড়িতে সমস্যা সৃষ্টি করে একাধিকবার বের হয়ে গেছেন। পরে তাঁকে বাড়িতে ফিরিয়ে আনা হয়েছে।

এবারও আনা হবে কি না, জানতে চাইলে আবদুর রহমান বলেন, ‘তিনি নিজে যেটা ঠিক মনে করবেন, সেটাই করবেন। এখানে আমাদের কিছু করার নেই।’ বাড়ি-জমি লিখিয়ে নেওয়ার জন্য চাপ দেওয়া প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘ওই জমি আমাদের (ভাইদের) নিজেদের টাকায় কেনা। সেটা মায়ের নামে ছিল। বাবা সেটা মায়ের কাছ থেকে নিজের নামে লিখিয়ে নিয়েছেন। এখন সেটা বিক্রি করতে চান। আমরা নিষেধ করেছি কেবল। নিজেদের নামে লিখিয়ে নেওয়ার জন্য চাপ দেওয়ার কথা ঠিক নয়।’

মহানন্দা প্রবীণ নিবাসের কর্মকর্তা মোস্তাফিজুর রহমানের সঙ্গেও এ বিষয়ে কথা হয়। তিনি বলেন, ‘অসহায় অবস্থায় তিনি (আবদুর রশিদ) আমাদের কাছে আশ্রয় চেয়েছেন। আমরা আশ্রয় দিয়েছি। স্ত্রী-সন্তানদের কাছে ফিরে যেতে বলেছি। কিন্তু তিনি যেতে চান না। আমরা তো আর তাঁকে তাড়িয়ে দিতে পারি না। এখন সন্তানদের দায়িত্ব তাঁকে বুঝিয়ে-শুনিয়ে ফিরিয়ে নিয়ে যাওয়া। এতে আমরা খুশিই হব।’

নিউজটি শেয়ার করুন

স্ত্রী–সন্তানদের অবহেলায় বৃদ্ধাশ্রমে ঠাঁই হলো রশিদের

আপডেট সময় ১১:৩৮:১৬ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ২৫ মার্চ ২০২২

৮৪ বছর বয়সী আবদুর রশিদের চার ছেলে ও এক মেয়ে। দুই ছেলে সরকারি চাকরি করেন, এক ছেলে ব্যবসায়ী ও অন্যজন শিক্ষার্থী। ছেলেরা অন্যত্র থাকেন এবং তাঁর খোঁজখবর নেন না। স্ত্রী ও মেয়েকে নিয়ে বসবাস করতেন তিনি। পরিবারের সদস্যদের অবহেলা, দুর্ব্যবহার ও সম্পত্তি লিখে দিতে চাপ দেওয়ার কারণে তিনি চাঁপাইনবাবগঞ্জের মহানন্দা প্রবীণ নিবাসে (বৃদ্ধাশ্রম) ঠাঁই নিয়েছেন।

বৃদ্ধাশ্রমে আবদুর রশিদের বিবরণী থেকে এসব তথ্য জানা গেছে। আবদুর রশিদ চাঁপাইনবাবগঞ্জ পৌর এলাকার নামোশংকরবাটী সিদ্দিক বিশ্বাসপাড়ার বাসিন্দা এবং কৃষি বিভাগের অবসরপ্রাপ্ত ব্লক সুপারভাইজার। সোমবার থেকে তিনি মহানন্দা প্রবীণ নিবাসে অবস্থান করছেন। এর মধ্যে স্ত্রী-সন্তানদের কেউ তাঁর খোঁজ নেননি।

বৃদ্ধাশ্রমে রশিদের বিবরণীতে লেখা হয়েছে, সম্প্রতি অবসরভাতার ৩৭ হাজার টাকা ব্যাংক থেকে উত্তোলন করেন আবদুর রশিদ। সেই টাকা স্ত্রী ও মেয়ে মিলে আত্মসাৎ করেন। তাঁর সঙ্গে দুর্ব্যবহারও করেন তাঁরা। এ ছাড়া তাঁর নামে থাকা বাড়ি ও জমি নিজেদের নামে লিখে দিতে চাপ দিচ্ছিলেন স্ত্রী-সন্তানেরা। এ কারণে মনের দুঃখে তিনি বৃদ্ধাশ্রমে আশ্রয় নিয়েছেন।

বৃদ্ধাশ্রমের প্রশাসনিক কর্মকর্তা মো. আলম বলেন, ‘তিনি আমাদের বলেছেন, সন্তানদের কাছে আর যাবেন না। মারা গেলেও যেন তাঁর লাশ সন্তানদের না দেওয়া হয় এবং বৃদ্ধাশ্রম কর্তৃপক্ষই কবর দেওয়ার ব্যবস্থা করে।’

ওই বৃদ্ধাশ্রমে কথা হয়, রশিদের সঙ্গে। এ সময় কান্নাজড়িত কণ্ঠে তিনি বলেন, ‘৬০ বছর ধরে স্ত্রীর সঙ্গে ঘর করছি। সন্তানদের লালন-পালন করলাম। কিন্তু কেউই আমার হইল না। আমি আর তাদের কাছে ফিরে যাব না।’ আবদুর রশিদ বলেন, সিরাজগঞ্জের শাহজাদপুরে তাঁর বাড়ি। চাকরিসূত্রে চাঁপাইনবাবগঞ্জে এসে এখানেই বিয়ে করে থিতু হন। বৃদ্ধাশ্রমের বিবরণীতে তাঁর সম্পর্কে লেখা তথ্য সঠিক বলে জানান তিনি।

এ ব্যাপারে কথা হয় রশিদের মেয়ে ফাতেমা খাতুনের (৩৫) সঙ্গে। এ সময় সব অভিযোগ অস্বীকার করে তিনি বলেন, ‘আমাদের বিরুদ্ধে দুর্ব্যবহার ও জমি লিখিয়ে নেওয়ার জন্য চাপ দেওয়ার যে অভিযোগ করা হচ্ছে, তা সম্পূর্ণ মিথ্যা। অবসরভাতার ৩৭ হাজার টাকার মধ্যে ২০ হাজার টাকা তিনি সঙ্গে নিয়ে গেছেন। ১৭ হাজার টাকা সংসারে খরচ হয়েছে।’ ফাতেমা খাতুন বলেন, ‘বৃদ্ধাশ্রম থেকে এক দিন ফোন দেওয়া হয়েছিল। আমি বলেছি, বাবাকে যেন বাড়িতে পৌঁছে দেওয়া হয়। আমরাই তাঁর দেখভাল করব।’

আবদুর রশিদের বড় ছেলে আবদুর রহমান (৫৫) বলেন, তাঁর বাবার বাড়ি ছেড়ে যাওয়া নতুন কিছু নয়। এর আগেও তিনি বাড়িতে সমস্যা সৃষ্টি করে একাধিকবার বের হয়ে গেছেন। পরে তাঁকে বাড়িতে ফিরিয়ে আনা হয়েছে।

এবারও আনা হবে কি না, জানতে চাইলে আবদুর রহমান বলেন, ‘তিনি নিজে যেটা ঠিক মনে করবেন, সেটাই করবেন। এখানে আমাদের কিছু করার নেই।’ বাড়ি-জমি লিখিয়ে নেওয়ার জন্য চাপ দেওয়া প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘ওই জমি আমাদের (ভাইদের) নিজেদের টাকায় কেনা। সেটা মায়ের নামে ছিল। বাবা সেটা মায়ের কাছ থেকে নিজের নামে লিখিয়ে নিয়েছেন। এখন সেটা বিক্রি করতে চান। আমরা নিষেধ করেছি কেবল। নিজেদের নামে লিখিয়ে নেওয়ার জন্য চাপ দেওয়ার কথা ঠিক নয়।’

মহানন্দা প্রবীণ নিবাসের কর্মকর্তা মোস্তাফিজুর রহমানের সঙ্গেও এ বিষয়ে কথা হয়। তিনি বলেন, ‘অসহায় অবস্থায় তিনি (আবদুর রশিদ) আমাদের কাছে আশ্রয় চেয়েছেন। আমরা আশ্রয় দিয়েছি। স্ত্রী-সন্তানদের কাছে ফিরে যেতে বলেছি। কিন্তু তিনি যেতে চান না। আমরা তো আর তাঁকে তাড়িয়ে দিতে পারি না। এখন সন্তানদের দায়িত্ব তাঁকে বুঝিয়ে-শুনিয়ে ফিরিয়ে নিয়ে যাওয়া। এতে আমরা খুশিই হব।’