ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচন
নৌকা ঠেকাতে আনারসে ভোট চাইলেন এমপি একরামুল
- আপডেট সময় ০১:৩৩:৩৬ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ২৮ জানুয়ারী ২০২২
- / ১৬০৬ বার পড়া হয়েছে
নিজেকে ‘শেখ হাসিনার প্রতিনিধি’ দাবি করে ইউপি নির্বাচনে নৌকা ঠেকাতে আনারসে প্রকাশ্য জনসভায় ভোট চাইলেন নোয়াখালী-৪ (সদর-সূবর্ণচর) আসনের আওয়ামী লীগের সংসদ সদস্য একরামুল করিম চৌধুরী।
বৃহস্পতিবার (২৭ জানুয়ারি) রাতে মোবাইলের সাহায্যে জনসভায় নৌকার বিরুদ্ধে মাইকে এমপি একরামুলের দেওয়া বক্তব্যের ১০ মিনিট ১৬ সেকেন্ডের একটি অডিও ফাঁস হয়েছে। এ নিয়ে সর্বত্র তোলপাড় চলছে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, এটি বুধবার (২৬ জানুয়ারি) নোয়াখালীর সূবর্ণচরের ৫নং চরজুবলী ইউনিয়নে দেওয়া। সেখানে উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক নৌকার প্রার্থী হানিফ চৌধুরীকে ভোট না দিয়ে আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী আনারস প্রতীকের স্বতন্ত্র প্রার্থী সাইফুল্লাহ খসরুকে ভোট দিতে ওয়াদা করান তিনি।
এতে তাঁকে বলতে শোনা যায়, নৌকার প্রার্থী এতোদিন আমার পা-চেটে দুই-তিন তলা বিল্ডিংয়ের মালিক হইছে। আর এখন সে আমাকে বলে রোহিঙ্গা। সূবর্নচর উপজেলা চেয়ারম্যানের (জেলা আওয়ামী লীগের আহ্বায়ক অধ্যক্ষ খায়রুল আনম সেলিম) কতো টাকার প্রয়োজন। সে আর ওবায়দুল কাদের (আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক) নেত্রীকে (শেখ হাসিনা) ভুল বুঝিয়ে আমাকে দাবিয়ে রেখেছে। আমি উপরে আল্লাহ আর দল যেহেতু করি নীচে শেখ হাসিনা ছাড়া কাউকে পরোয়া করি না।
এ সময় আনারস প্রতীকের পক্ষে শ্লোগান দিয়ে স্বতন্ত্র ওই প্রার্থীকে নিজের ছেলের মতো ভালোবাসেন বলে উল্লেখ করেন। এছাড়া তাকে জেতানোর জন্য যা যা করা লাগে সব করতে নিজের অনুসারিদের নির্দেশ দিতেও শোনা গেছে। প্রয়োজনে প্রতিপক্ষের (নৌকার) লোকজনে হাত কেটে রেখে দিতেও নির্দেশ প্রদান করেন এ এমপি। আগামি ১০ ফেব্রুয়ারি এ ইউনিয়নের নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে।
এরআগে কবিরহাট উপজেলায় তার নিজ ইউনিয়ন সুন্দলপুরে ও নোয়াখালী পৌরসভার নির্বাচনেও আওয়ামী লীগ মনোনীত নৌকা প্রতীকের প্রার্থীদের বিরোধীতা করার অভিযোগ উঠে এমপি একরামুল করিম চৌধুরীর বিরুদ্ধে।
সুন্দলপুরে কবিরহাট উপজেলার আওয়ামী লীগের সভাপতি নুরুল আমিনকে হারিয়ে চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন (আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী) স্বতন্ত্র প্রার্থী এমপি একরাম চৌধুরীর ভাই মো. ইলিয়াছ। তবে নোয়াখালী পৌরসভায় এমপির সমর্থিত স্বতন্ত্র প্রার্থী লুৎফুল হায়দার লেলিন জামানত হারিয়েছেন। ওই নির্বাচনে নৌকার প্রার্থী মো. সহিদ উল্যাহ খান (নৌকা) ২৬ হাজার ৪০৮ ভোট পেয়ে নির্বাচিত হন।
এদিকে স্থানীয় সংসদ সদস্য হিসেবে একরাম চৌধুরী সূবর্ণচরের চরজুবলী ইউনিয়নে প্রকাশ্যে নৌকার বিরোধিতা করায় স্থানীয় আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা বিব্রতকর পরিস্থিতিতে পড়েছেন। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক নেতা দাবি করেছেন, এমপি তাদেরকে আনারসের পক্ষে থাকতে টেলিফোনে চাপ দিচ্ছেন।
অন্যদিকে স্থানীয় সরকার নির্বাচনে আওয়ামী লীগের একজন সংসদ সদস্য হয়ে প্রকাশ্যে নৌকার বিরোধিতা করায় জনমনেও দ্বিধাদ্বন্দ্বের সৃষ্টি হয়েছে। অনেকে মনে করছেন, এমপি হিসেবে স্থানীয় প্রশাসনের উপর প্রভাব রয়েছে একরামের। তার কথা না শুনলে যেকোনো সময় অযাচিত বিপদও হতে পারে।
নোয়াখালী জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম আহবায়ক অ্যাডভোকেট শিহাব উদ্দিন শাহীন ফাঁস হওয়া বক্তব্যটি শুনেছে বলে জানান। তিনি বলেন, এ ব্যাপারে পর্যালোচনা করে দলের নেতৃবৃন্দ সিদ্ধান্ত নেবেন। আমরা এখন শেখ হাসিনার দেওয়া নৌকা প্রতীকের প্রার্থীকে জেতাতে মাঠে কাজ করছি।
অভিযোগের বিষয়ে এমপি একরামুল করিম চৌধুরীকে ফোন করা হলেও তিনি রিসিভ করেননি।