নোয়াখালীর চাটখিল পৌরসভার পথচলা শুরু ১৯৯৫ সালের ১ জানুয়ারি। ৯টি ওয়ার্ড নিয়ে গঠিত পৌরসভাটির আয়তন ১৪.৫ বর্গকিলোমিটার। এখানে প্রায় ৬০ হাজার লোকের বাস।
মোট ভোটার ২১ হাজার ১০১ জন। এর মধ্যে পুরুষ ভোটার ১০ হাজার ৬৫৮ জন ও নারী ভোটার ১০ হাজার ৪৪৩ জন। ২০০৬ সালে পৌরসভাটি প্রথম শ্রেণিতে উন্নীত হয়। বর্তমান মেয়রের দায়িত্ব পালন করছেন উপজেলা যুবলীগের আহ্বায়ক মোহাম্মদ উল্যা পাটোয়ারী। ২০১৫ সালের ডিসেম্বরে নির্বাচনে তিনি বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় মেয়র নির্বাচিত হন। মনোনয়ন জমা দিয়েও প্রত্যাহারের শেষদিন বিএনপির প্রার্থী নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ান।
মেয়রের দায়িত্ব নিয়ে গত সাড়ে তিন বছরে মোহাম্মদ উল্যা পাটোয়ারী উন্নয়নমূলক অনেক কাজ করেছেন। বিভিন্ন রাস্তা পাকা করেছেন তিনি। পৌর কিচেন মার্কেট নির্মাণ করেছেন।
পৌরবাসীর দীর্ঘদিনের দাবি পৌর কবরস্থান তৈরি করছেন। তারপরও রয়ে গেছে অনেক সমস্যা। প্রথম শ্রেণির পৌরসভা হিসেবে যেসব সুযোগ-সুবিধা পাওয়ার কথা তা পৌরবাসী পাচ্ছেন না বলে অনেকেরই অভিযোগ।
চাটখিল মুক্তিযোদ্ধা সংসদের কমান্ডার পৌরসভার ২নং ওয়ার্ডের বাসিন্দা মুক্তিযোদ্ধা রফিকুল ইসলাম বলেন, পৌরসভাটি প্রথম শ্রেণিতে উন্নীত হলেও নাগরিক সুবিধা তেমন একটা বাড়েনি।
বৃষ্টি হলেই পৌর এলাকার বিভিন্ন স্থানে পানি জমে। পৌর এলাকার খাল, নালা সংস্কারে কোনো ব্যবস্থা নেয়া হয়নি। বাসস্ট্যান্ড না থাকায় যানজট লেগেই থাকে। ডেঙ্গু প্রতিরোধ তথা মশা ধ্বংসে মেয়র কার্যকর কোনো পদক্ষেপ নিতে পারেননি। অনেক রাস্তার অবস্থা করুণ। খানা-খন্দে ভরে গেছে।
মুক্তিযোদ্ধা রফিকুল ইসলাম বলেন, পৌরবাসীর জন্য বিশুদ্ধ পানি সরবরাহের ব্যাপারে মেয়র এ পর্যন্ত কোনো প্রদক্ষেপ নিতে পারেননি।
৪নং ওয়ার্ডের বাসিন্দা আলতাফ মোল্লা বলেন, চাটখিল শুধু নামেই প্রথম শ্রেণির পৌরসভা। আমাদের ওয়ার্ডে প্রবেশপথে ময়লা-আবর্জনা ফেলে ভাগাড় সৃষ্টি করা হয়েছে। ময়লা-আবর্জনার দুর্গন্ধে এলাকাবাসী চরম দুর্ভোগের শিকার হচ্ছেন।
এসব অভিযোগের জবাব দিতে যুগান্তরের মুখোমুখি হয়েছিলেন মেয়র মোহাম্মদ উল্যা পাটোয়ারী। তিনি বলেন, তিন কোটি টাকা দেনা নিয়ে মেয়রের দায়িত্ব নেই। ওই দেনা পরিশোধের পাশাপাশি পৌর এলাকার ব্যাপক উন্নয়ন করেছি।
প্রধানমন্ত্রীর ব্যক্তিগত সহকারী ও জেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি জাহাঙ্গীর আলমের সহযোগিতায় সরকারের কাছ থেকে ১৬ কোটি টাকার বিশেষ বরাদ্দ পাই। বরাদ্দের ১১ কোটি টাকার কাজ ইতিমধ্যে শেষ হয়েছে। বাকি কাজ চলমান রয়েছে। এ ছাড়া কুয়েত ফান্ড থেকে ১৪ কোটি টাকা বরাদ্দ পাওয়া গেছে। ওই টাকার উন্নয়ন কাজের টেন্ডার প্রক্রিয়াধীন রয়েছে।
মেয়র বলেন, পৌরবাসীর সুবিধার জন্য ১ কোটি ১৮ লাখ টাকা ব্যয়ে পৌর কিচেন মার্কেট নির্মাণ করা হয়েছে। যা গত ১৫ দিন আগে চালু করা হয়েছে। এ ছাড়া পৌর এলাকার বিশিষ্ট দানবীর ও বিশিষ্ট ব্যবসায়ী আবদুল মান্নান ভূঁইয়ার দান করা ৩০ শতাংশ ভূমিতে পৌর কবরস্থান নির্মাণ করেছি।
ময়লা-আবর্জনা ফেলার জন্য পৌর এলাকার বাইরে ১২০ শতাংশ ভূমি ক্রয় করেছি। ওই জমিতে ফেলা ময়লা-আবর্জনা থেকে জৈব সার উৎপাদান করা হবে; যা কৃষকদের মাঝে ন্যায্যমূল্যে বিক্রি করা হবে।
তিনি বলেন, নির্বাচনের সময় দেয়া প্রতিশ্রুতির প্রায় ৮০ ভাগ কাজ বাস্তবায়ন করেছেন। বাকি ২০ ভাগ কাজ মেয়াদ শেষ হওয়ার আগেই শেষ করতে পারব বলে আশা করছি।
জলাবদ্ধতার বিষয়ে মেয়র মোহাম্মদ উল্যা বলেন, এ সমস্যার সমাধান করতে পারিনি। পৌর এলাকার জলাবদ্ধতা নিরসনে খাল দখলকারীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে জেলা ও উপজেলা প্রশাসনের সহযোগিতা চেয়েছি। আশা করছি, শিগগির প্রশাসন এ ব্যাপারে ব্যবস্থা নেবে।
পৌর বাস টার্মিনাল নির্মাণ না হওয়া প্রসঙ্গে তিনি বলেন, উপযুক্ত জায়গা না পাওয়ায় বাস টার্মিনাল নির্মাণ করা যাচ্ছে না। তবে পৌর এলাকায় ৪টি সিএনজি স্টেশন ও ৫টি রিকশা স্ট্যান্ড রয়েছে।
মেয়র বলেন, পৌর শিশু পার্ক ও খোলার মাঠ তৈরির ব্যাপারে চেষ্টা চলছে। জায়গা পাওয়া গেলেই এ কাজ শুরু করব।
তিনি বলেন, আধুনিক ড্রেনেজ ব্যবস্থার সুবিধা পেতে যাচ্ছে পৌরবাসী। ইতিমধ্যে পৌর এলাকায় ২১.০৫ কিমি. ড্রেন নির্মাণ করা হয়েছে। সুপেয় পানি সরবরাহের জন্য ইতিমধ্যে একটি প্রকল্প হাতে নেয়া হয়েছে। ওই প্রকল্পের কাজ ধাপে ধাপে এগিয়ে যাচ্ছে। পৌরবাসী সুপেয় পানিও পাবে।
শিক্ষার মান উন্নয়ন ও স্বাস্থ্যসেবা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, পৌর এলাকার শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শিক্ষার মান উন্নয়নে নানা পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে। শিক্ষকদের যথাসময়ে উপস্থিতি নিশ্চিত করার জন্য ডিজিটাল হাজিরা চালু করা হয়েছে। গরিব ও মেধাবী শিক্ষার্থীদের নানাভাবে সহায়তা করছি। আর পৌরবাসীর স্বাস্থ্য নিশ্চিতে হাসপাতাল ও স্বাস্থ্যসেবা কেন্দ্রের দায়িত্বপ্রাপ্তদের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ রাখছি। ডেঙ্গু প্রতিরোধে পৌর শহরের সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, অলি-গলিসহ সব স্থানে মশার ওষুধ প্রয়োগ করে যাচ্ছি।
সন্ত্রাস, চাঁদাবাজি, ছিনতাই, মাদক বিক্রি, যৌন হয়রানির বিষয়ে মেয়র বলেন, এসব অপরাধের সঙ্গে জড়িত কাউকে ছাড় দেয়া হচ্ছে না। কাউন্সিলর ও এলাকার গণ্যমান্য ব্যক্তিদের নিয়ে এসব সামাজিক অপরাধের বিরুদ্ধে সচেতনতামূলক কর্মসূচি পালন করা হচ্ছে।
উন্নয়ন কাজে ঘুষ-দুর্নীতির অভিযোগ প্রসঙ্গে মেয়র বলেন, বর্তমানে পৌরসভায় কোনো দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তা-কর্মচারী নেই। পৌর কার্যালয়কে অনেকাংশেই দুর্নীতিমুক্ত করতে সক্ষম হয়েছি।
মেয়র মোহাম্মদ উল্যা পাটোয়ারী বলেন, জননেত্রী শেখ হাসিনার আশীর্বাদ নিয়ে চাটখিল পৌরসভাকে একটি আধুনিক ডিজিটাল পৌরসভায় রূপ দিতে নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছি।